গাড়ি পার্কিং নিয়ে নিউইয়র্ক সিটির সর্বত্র ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ খেলা চলছে। বিশেষ করে ফ্রি পার্কিং এলাকায় কার্যত পার্কিং পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে পার্কিং সঙ্কট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। ফ্রি দূরের কথা, মিটারেও মিলছে না পার্কিং। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিউইয়র্কবাসীকে।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার ও ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় পার্কিং পাওয়া এখন যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় লেগেইে আছে।
নিউইয়র্ক সিটির পরিবহন বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক সিটিতে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পার্কিংয়ের স্থান নেই। পার্কিংয়ের চাপ কমাতে সিটির বহু ফ্রি পার্কিং এলাকা মিউনিমিটারের আওতায় আনা হয়েছে। এমনকী মিউনিমিটারের সময় কমানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসছে না। এ কারণে নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক পার্কিং বাড়ানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানান, এই এলাকায় পার্কিং পেতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু হয়ে যায়। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৩৭ অ্যাভিনিউতে পার্কিং করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন সামনে গাড়ি বের হবে। কিন্তু ওই গাড়ি বের হবার সাথে সাথে আরেকটি গাড়ি সেখানে ঢুকিয়ে দেয়। এসব নিয়ে কোথাও কোথাও হট্টগোলের খবর পাওয়া যায়।
এদিকে গত সপ্তাহে পার্কিং নিয়ে বিরোধে জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিটে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সড়কে পার্কিং নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার পর যিনি পার্ক করেছিলেন, পরে এসে দেখেন তার গাড়ি কে বা কারা ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি পুলিশ রিপোর্ট হয়েছে।
সবচেয়ে বেশী পার্কিং ক্রাইসিস দেখা দেয় জ্যাকসন হাইটস এলাকায়। এই এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন গ্রোসারি, রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব স্থানে শুধু নিউইয়র্ক নয়, আশেপাশের স্টেট থেকে বাংলাদেশিরা বাজার করতে আসেন। আর এসে নিজেরা যেমন বেকায়দার পড়েন, বেকায়দায় ফেলেন অন্যদেরও। পার্কিং না পেয়ে তারা গাড়ি যত্রতত্র পার্কিং করে বাজার করেন। ফলে সড়কে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। পুলিশও পরিস্থিতি সামাল দিতে বেকায়দায় পড়ছেন। একের পর এক টিকেট দিয়েও বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাচ্ছে না।
এদিকে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ স্ট্রিট করার প্রকল্প ও পরিকল্পনা সফল হওয়ার পর এবার জ্যাকসন হাইটস এলাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য পার্কিং লট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিটে যে খালি জায়গা আছে, সেখানে বেশ কিছু গাড়ি একসঙ্গে পার্ক করা সম্ভব। ওই জায়গাকে টার্গেট করেই সেখানে পার্কিং লট করার চেষ্টা চলছে।
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান ঠিকানাকে বলেন, আমি যেহেতু মেয়রের অফিসের সঙ্গে থেকে কাজ করছি, তাই মেয়রের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ আছে। আমি মেয়র এরিক অ্যাডামসকে বলেছি, তিনি যেন জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য এখানে একটি পার্কিং লট করে দেন। জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিটের খালি জায়গায় পার্কিং লট করার জন্য আমি মেয়রকে অনুরোধ করেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।