নিউয়র্ক সিটিতে স্কুল বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন জুয়েল রানা নামের এক বাংলাদেশী ডেলিভারিম্যান। বিদ্যুৎচালিত সাইকেলে ডেলিভারি কাজের সময় ঈদের আগের দিন বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকাল সোয়া ৫টায় কুইন্স বুলোভার্ড এবং জ্যাকসন এভিনিউতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কমিউনিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুুলিশ জানায়, জুয়েল সাইকেল চালিয়ে লং আইল্যান্ড সিটির জ্যাকসন এভিনিউ ধরে দক্ষিণে যাবার সময় ইন্টারসেকশনে কুইন্স বুলেভার্ডগামী (পূর্ব দিন) স্কুল বাসের ধাক্কা খান। বাসের ড্রাইভার সজোরে ধাক্কা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানায়। এসময় স্কুল বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন জুয়েল। তার সাইকেলটিও চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে দুমড়ে গেছে। দূর্ঘটনার সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স এসে জুয়েলকে নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়েন ওয়েল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারে নেয়। কিছুক্ষণ পর হাসাতালের জরুরি বিভাগেই জুয়েল শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে বলে পুলিশ বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। তদন্ত কর্মকর্তারা আশপাশের সিসিটিভি পরীক্ষার পর জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন যে, বাসটি গ্রীণ লাইট অতিক্রম করছিল। অপরদিকে জুয়েল রেড লাইটে ছিলেন। পুলিশের মতে মৃত্যুর জন্যে জুয়েলই দায়ী। তবে জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনেরা তা মানতে রাজি নন। তারা আইনী লড়াই চালাবেন।
অপরদিকে, অকুস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়েসী ঘাতক বাস ড্রাইভার। পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা করা হয়, তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন কিনা। পরীক্ষার রিপোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি পুলিশ। মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের বাংলা বাজার এলাকার জজ মিয়ার সন্তান জুয়েলের এক শিশু পুত্র ও কন্যা, স্ত্রী এবং মা-বাবা-ভাই-বোন রয়েছেন দেশে। ৭ মাস আগে দালালকে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ৪৩ বছর বয়সী জুয়েল রানা।
মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি শাহাদৎ হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ঘাতক বাস এবং তার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের পর জুয়েলের লাশ পাওয়া গেলেই বাংলাদেশে তার স্বজনের কাছে পাঠানো হবে। এজন্য চলছে প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে এটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, জুয়েল রানার মৃত্যুর তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টাও করা হবে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে জুয়েল ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মোবাইল মেরামত-দোকানে মেকানিক্স ছিলেন। নিউইয়র্কে একটি স্টোরের কাজের পাশাপাশি ডেলিভারিম্যানেরও কাজ নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৭ বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে কমপক্ষে ৮জন বাংলাদেশী ডেলিভারিম্যানের প্রাণ গেছে গাড়ির ধাক্কায় কিংবা দুর্বৃত্তের হাতে।
এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী রোববার এই প্রতিনিধিকে জানান, জুয়েল রানার মরদেহ মর্গে রয়েছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে তার মরদেহ হস্তান্তর হবে বলে আশা করছি। পরবর্তীতে তার নামাজে জানাজা শেষে মঙ্গলবার রাতের কোন ফ্লাইটে তার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতি ইউএস’র সভাপতি মির্জা মনিরুজ্জামান শামীম ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিন্টু জানান, আমরা জুয়েল রানার সর্বশেষ খোঁজ খবর রাখছি। তার মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এজন্য অর্থ সংগ্রহও চলছে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের এই ইন্টারসেকশনটি ২০১৪ সাল থেকেই মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত। সিটির সড়ক দুর্ঘটনা নিবন্ধনকারী সংস্থা ক্র্যাশমেপার সূত্রে প্রকাশ বিগত তিন বছরে এখানে ১০৩টি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ জন সাইকেল-চালকসহ আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এরমধ্যে পথচারী ছিলেন ৪ জন। ওই দুর্ঘটনার সময় গাড়ির প্যাসেঞ্জার আহত হয়েছেন ৩৩ জন।