বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ছিল নিয়ন্ত্রিত : সুজন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৩০ বার

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নিয়ন্ত্রিত। তবে অতীতের তুলনায় এ নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনগুলো যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এক অনলাইন জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশের মতে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

সোমবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০ বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। বক্তব্য দেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস।

সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুবই অল্প ভোট পড়েছে। উত্তর সিটিতে গড় ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে পড়েছে গড়ে ২৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, এতো কম ভোটার উপস্থিতির কারণ ভোট সুষ্ঠু হবে না- এ ধরনের পূর্ব ধারণা।

প্রতিবেদনে স্বল্প ভোটার উপস্থিতির আরো কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থা না থাকা (অর্থাৎ ভোট সুষ্ঠু হবে না এ ধরনের পূর্ব ধারণা), ইভিএম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার ও আস্থা না থাকা, দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হুমকির কারণে শঙ্কিত হয়ে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ হওয়া, পাড়া-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্র পাহারা এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জটলা ও মহড়া, আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে কিছু ভোটারের ভোট না দিয়েই ফিরে যাওয়া, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়া, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে ‘ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তাদের প্রার্থী জয়ী হবেই’ এমন ধারণা বদ্ধমূল থাকা, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ও ‘তাদের প্রার্থী জিততে পারবে না’ এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ। তা ছাড়া যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা এবং একসাথে দু’দিন ছুটি থাকাও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ।

প্রতিবেদন তুলে ধরে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হলো, তা জানতে নির্বাচনের পর সুজনের ফেসবুক পেজে আমরা একটি অনলাইন ভোটের (পোল) ব্যবস্থা করি। আমাদের প্রশ্ন ছিল- ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে আপনি মনে করেন কি না?’ এতে চার হাজার ৩০০ মানুষ অংশ নেন। তাদের ৯৪ শতাংশ বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে। সুজন বলছে, একটি প্রচার আছে যে, নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরও যদি সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল।

সুজনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই সিটি নির্বাচনে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীরা তুলনামূলক বেশি নির্বাচিত হয়েছেন। উত্তরে ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়লেও দক্ষিণে সেটা কমেছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে বিজয়ী প্রার্থীদের ৩৪ দশমিক ২৪ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বা স্নাতকোত্তর। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বছর নির্বাচিতদের ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত অর্থাৎ এসএসসি বা তার নিচে। ২০১৫ সালে স্বল্প শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচিত ব্যক্তিদের ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত। ২০১৫ সালে স্বল্পশিক্ষিত বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন ৫১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এবার দক্ষিণে বিজয়ীদের ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ২১ দশমিক ১০ শতাংশ। ঢাকা উত্তরে নির্বাচিত ৭৩ জনপ্রতিনিধিদের ৮৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ৬৩ জন ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে ব্যবসায়ী নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্য দিকে দক্ষিণে নির্বাচিত ১০১ জনপ্রতিনিধির ৭৬ জন বা ৭৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে দক্ষিণে ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি ছিলেন ৮০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে ব্যর্থ, তা সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কমেছে, যা একটি অশনিসঙ্কেত।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন ছিল নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। তারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে দৃশ্যমান কারচুপি হয়েছিল। এবার অদৃশ্য কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে কারচুপির তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল সুজন, এবারো তারা সেই দাবি জানাচ্ছে।

বদিউল আলম বলেন, ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেশি সম্পদশালীরা বেশি নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ আর ব্যবসায়ের রাজনীতিকীকরণ চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ভোটের মাধ্যমে জনগণকে অপমান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরাজয় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। না হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা, সংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন সব প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন-এর কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমদ, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহনাজ হুদা প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com