সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন

বজ্রপাতে কেন এত লোক মারা যাচ্ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৬৮ বার

বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ১৬৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু বজ্রপাত প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আর প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় হলেও বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

এবারো ঝড় বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়েছে বজ্রপাত। প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। বৃষ্টি আর ঝড় হলেই বজ্রপাতে একাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের পূর্বঞ্চলের ছয়টি উপজেলায় এক দিনে বজ্রপাতে ৯ জন প্রাণ হারান। এরপর ২৭ এপ্রিল এক দিনে ছয় জেলায় আটজন বজ্রপাতের ফলে প্রাণ হারিয়েছেন।

বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। ফিনল্যান্ডভিত্তিক বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণাসংস্থা ভাইসালার তথ্য এটি।

বিশ্লেষকদের মতে, শহরে বেশিরভাগ ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুতেমন হয় না। কিন্তু গ্রামে তা না থাকা ও বড় গাছপালা কমে গিয়ে খোলা মাঠের কারণে সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাদের কথা দেশের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ সেখানকার বেশিরভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই।

বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খোলা জায়গায় যেখানে উঁচু কোনো গাছ নেই বা বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেই সেখানে যারা থাকেন তারা শিকার হন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে বজ্রপাতে কমবেশি ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। গত এক যুগে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১৬০ মারা গেছেন। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম জানান, ‘বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যে সব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদি পশু। ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদি পশুও মারা যায়।’

তার পরামর্শ হলো, ‘আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে বা ঝড় বৃষ্টি শুরুর সংকেত পাওয়া গেলে মানুষকে এমন কোনো স্থাপনায় আশ্রয় নিতে হবে যা বিদ্যুৎ কুপরিবাহী। কোনোভাবেই গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। কারণ গাছ বিদ্যুৎ পরিবাহী। গাছের নিচে আশ্রয় নিলে গাছের বিদ্যুৎ মানুষকে আক্রান্ত করবে।’

বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রতিরোধ ও মানুষের জীবন বাঁচাতে সারাদেশে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এক কোটি তাল গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। এরমধ্যে সারাদেশে ৩৮ লাখ চারা রোপণের পর দেখা যায় যে এক বছরের মধ্যেই অযত্নে অবহেলায় মারা গেছে। এই পরিকল্পনা যথার্থ ছিল না বলে মনে করেন আব্দুল আলীম। কারণ তালগাছ রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও এগুলো বড় হয়ে মানুষের চেয়ে উঁচু হতে ২০-৩০ বছর সময় লেগে যায়। তার মতে, এখন প্রয়োজন হলো, ‘ফাঁকা জায়গাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র এবং টাওয়ার স্থাপন করা। টাওয়ারের উপরে লাইটিনিং প্রটেকশন সিস্টেম বসাতে হবে। এর দুটি পদ্ধতি আছে লাইটিনিং অ্যারেস্টর ও এয়ার টার্মিনাল। অল্প সময়ে সহজ পদ্ধতি হলো বজ্র নিরোধক দণ্ড। এগুলো বসাতে হবে। দীর্ঘ পরিকল্পনায় তাল গাছ, নারকেল গাছ লাগানো যেতে পারে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘তালগাছ প্রকল্প আমরা বাতিল করেছি। এটা কোনো ফল দেয়নি। আর তালগাছ বড় হতে অনেক বছর সময় লাগে। এখন আমরা লাইটিনিং অ্যারেস্টারসহ লাইটিনিং শেল্টার নির্মাণ এবং আর্লি ওয়ার্নিং ফর লাইটিনিং, সাইক্লোন অ্যান্ড ফ্লড- এই দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় লাইটিনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করেছি। গত বছর টিআর-কাবিখার প্রজেক্টের অর্থ দিয়ে আমরা এগুলো স্থাপন করেছি। পর্যায়ক্রমে আরো বজ্রপাতপ্রবণ জেলায় এগুলো বসানো হবে।’

তার কথায়, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে ২৫০-৩০০ লোক মারা যায়। এর মূল কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এক ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে ১২ শতাংশ বজ্রপাত বেড়ে যায়।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com