কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এবার অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার বাজার। জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুচিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, তেজপাতার দাম কেজিতে বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়া, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখা এবং সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মসলার দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কোরবানের আগে দাম বাড়াতে পারবে না বলে আগেভাগেই মাংসের অত্যাবশ্যকীয় মসলা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে সরকারের তদরকি সংস্থার চাপে দাম কমাতে হলে মোটা অঙ্কের লাভ রেখে কমাতে পারেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, দুই মাস আগে জিরা কেজি ছিল ৩২০ টাকা। এখন ৭৩০ টাকা। খাতুনগঞ্জে কেজিতে ৭২ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৯০ টাকা, কেজিতে ৯৭ টাকা বেড়ে গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়, কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে দারুচিনির দাম। এখন ৫৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০৮ টাকা। এটার দাম দুই মাস আগে ছিল ১৩৮ টাকা।
প্রতি কেজি সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩৫৪ টাকা, মেথি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আলু বোখারা ৪৮০ থেকে ৫০৪ টাকা, কিশমিশ ৪৪২ থেকে ৪৭০ টাকা, কাঠবাদাম ৭৩২ থেকে ৭৬০ টাকা, কাজুবাদাম ৮১৯ থেকে ৯৫০ টাকা, পেস্তা ২৬৬০ থেকে ২৭৪৩ টাকা ও পাঁচফোড়ন ১৫২ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মসলার দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা।
মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লবঙ্গ-এলাচের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবঙ্গ ৩০০ ও এলাচ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ২৬১০ ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৭৯০ টাকা।
রোজার ঈদে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগেও প্রতি কেজি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুন কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
অন্যদিকে, গত ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। তাই বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পেঁয়াজ নেই। রোজার শেষদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহখানেক আগেও পণ্যটি ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এজন্য দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে বাজারে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। এছাড়া আদা মাঝখানে আমদানি কম হয়েছে। এজন্য দাম একটু বাড়তির দিকে। এখন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চীন এবং মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি হচ্ছে। দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা কম।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেটের সাধারণ সম্পদক মো. ইদ্রিস আমাদের সময়কে বলেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই আমদানি করা মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে। বর্তমানে রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরাও বিপাকে পড়েছেন। তবে সরবরাহ বেড়ে গেলে মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের চাপে কোরবানির আগে কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মসলা পণ্যের দাম বাড়াতে পারছেন না। এখন ব্যবসায়ীরা কৌশলী হচ্ছেন। আগেভাগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে প্রশাসনের চাপে কমাতে হলে অতিরিক্ত মুনাফা রেখেই কমাতে পারেন। আমাদের দাবি হচ্ছে, প্রশাসনের এখন থেকে বাজার তদারকি করা। তাহলে তাদের চালাকি ধরা পড়বে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, রোজার ঈদে আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়েছি। কোরবানির ঈদেও সেটা বজায় থাকবে। বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে আমরা আমদানি মূল্য, বিক্রয়মূল্য সবকিছু খতিয়ে দেখব। কোনো ধরনের কারসাজি পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।