নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এনওয়াইপিডির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরতদের ইউনিয়নের একটি শূন্য পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়লাভ করেছেন, সাংবাদিক শিবলী চৌধুরী কায়েস। ট্রাফিক ইউনিয়ন “সিডাব্লিউ-লোকাল-১১৮২’-এর এই প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে গেল মে ৩, ২০২৩ বুধবার। এতে এনওয়াইপিডি ট্রাফিক বিভাগের কুইন্স-ব্রঙ্কস বোরোর ডেলিগেট হিসেবে ৬জন প্রার্থীর মধ্যেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ ও সাংবাদিক কায়েস।
এ নির্বাচিন পরিচালনা করেছে ‘আমেরিকান আর্বিট্রেশান অ্যাসোসিয়েশন’। মাত্র একটি শূন্য পদের বিপরীতে যে ছয়জন প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যেপাঁচজন বাংলাদেশি আর অন্যজন ছিলেন, আফ্রিকান-আমেরিকান। ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত প্রায় ৫শ ৭২জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১শ ২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শিবলী চৌধুরী কায়েস। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রঙ্কস ট্রাফিক কমান্ডের শামীম হক পেয়েছেন ১শ ৯ ভোট, কুইন্স কমান্ড থেকে নির্বাচনী দৌড়ে অংশ নেয়া তৃতীয় আরেক বাংলাদেশি চন্দন দাস পেয়েছেন ১’শ ৪ ভোট, আদিল হোসাইন ৯৫, হোসেইন মোহাম্মদ এম ৫৬ এবং সর্বশেষ একমাত্র নন-বাংলাদেশি ও কৃষাঙ্গ প্রার্থী পিয়ের পি পেয়েছেন ৭৮ ভোট। এর মধ্যে বাতিল হয়ে যায় ৩টি। সবাইকে পেছনে ফেলে জয়লাভ করেন ট্রাফিক বিভাগের নতুন মুখ শিবলী চৌধুরী কায়েস।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ-এনওয়াইপিডির তিনটি শাখার মধ্যে রেগুলার পুলিশ, স্কুল সেফ্টি ও ট্রাফিক বিভাগেই অনেকদুর এগিয়েছেন বাংলাদেশিরা। এরই অংশ হিসেবে এনওয়াইপিডি ট্রাফিক ইউনিয়নেও বেশ শক্ত অবস্থানে তারা। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট, সেক্রটারি ও ট্রেজারার’সহ পাঁচজন ডেলিগেট বাংলাদেশি। কেবলমাত্র ভাইস-প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন একজন নন-বাংলাদেশি।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটি সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেই মূলধারার ইউনিয়নে সম্পৃক্ততাকে বাংলাদেশিদের কর্মদক্ষতারই ফসল বলে মনে করছেন নব-নির্বাচিত ইউনিয়ন ডেলিগেট শিবলী চৌধুরী কায়েস। তিনি বলেন, ” মূলত অভিবাসিদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সিভিল-সার্ভিস কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশিরা। এনওয়াইপিডিতেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।”
জানান- “কর্মদক্ষতা এবং মেধাগুনে অনেকেই পাচ্ছেন পদোন্নতি। সেই সাথে মূলধারার রাজনীতি’সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিদের এগিয়ে চলা অব্যাহত রয়েছে। যার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগও অন্যতম। যেখানে এন্ট্রি লেভেল থেকে শুরু করে অসংখ্য সুপারভাইজার’সহ শীর্ষ পদে আসীন হচ্ছেন অভিবাসি ও তাদের সন্তানেরা।”
তবে, কমিউনিটির এগিয়ে চলায় বিদেশের মাটিতে দেশীয় রাজনৈতিক চর্চা ভুলে আমেরিকান মূলধারায় ও কর্মক্ষেত্রে মনোযোগি হওয়ার কোন বিকল্প নেই। এমনটিও যোগ করেন কায়েস। আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘কমিউনিটির ঐক্যই আগামিতে আর শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবেন বাংলাদেশিরা।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ঢাকায় মূলধারায় দুটি টিভি চ্যানেল এবং জাতীয় দৈনিকে টানা ১৬ বছর কাজ করেছেন শিবলী চৌধুরী কায়েস। প্রায় দশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসি হন তিনি। কায়েস শুরু থেকেই নিউইয়র্কে সাংবাদিকতায় পেশায় সম্পৃক্ত। কমিউনিটির উন্নয়ন ও এগিয়ে চলায় তার পেশাদারিত্বের সুনাম, সুখ্যাতি সমাদৃত। ছিলেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল টাইম টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক। এছাড়া অভিবাসিদের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রাণের সংগঠন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ ও সম্পাদক ও সদস্য সচিব হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন শিবলী চৌধুরী কায়েস। সেখান থেকে বেরিয়ে ভিন্ন ধারার টিভি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন। সাউথ -এশিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল টিটি কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। বলতে গেলে- কমিউনিটি ও প্রজন্মের সাথে মুলধারার সেতুবন্ধনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কায়েস। তার নিরলস প্রচেষ্টায় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস থেকে চ্যানেল টিটি ২৪/৭ সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া, ঢাকার কারওয়ান বাজারে রয়েছে চ্যানেলটির ব্যুরো অফিস।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি করোকালিন সময়ে নিউইয়র্ক সিটির ট্রাফিক পুলিশে যোগদান করেন। মাত্র দুই বছরেই সহকর্মীদের আস্থাভাজনে রূপ নেন তিনি। যার ফলশ্রুতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সহকর্মীদের সাথে নির্বাচনী দৌড়ি জয়লাভ করে ট্রাফিক পুলিশের এই নতুন মুখ। কায়েস বিশ্বাস করেন, নিউইয়র্কের সিভিল সার্ভিস তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকুরির পাশাপাশি স্বদেশিদের রক্ষাই তার প্রধান লক্ষ্য। সেই সাথে- তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন’সহ মূলধারায় নিজের লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন। আর এ জন্য কমিউনিটি’সহ সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্নক সহযোগিতা পাবেন বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।