প্রস্তুতি ম্যাচের পর মূল ম্যাচও ভেসে গেল বৃষ্টিতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আম্পায়ার বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড মধ্যকার সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হন। বৃষ্টি আইনে ফলাফলহীন থেকে গেল চেমসফোর্ডের ম্যাচটি।
প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারার একটা আক্ষেপ ছিল, এবার যেন তার অনেকটাই দূর হলো। ম্যাচের ফলাফল না এলেও পুরো ইনিংস ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। বল হাতেও বোলাররা পেয়েছে ১৬.৩ ওভার। একেবারে না পাওয়ার থেকে এই বা কম কী! সাকিব-মিরাজ বাদে কম-বেশি বল করেছেন বাকি চার বোলারই।
তবে এতে কপাল পুড়েছে আয়ারল্যান্ডের। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি আর খেলা হচ্ছে না তাদের। এই সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার বিকল্প ছিল না আইরিশদের সামনে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ায় সেই সুযোগ আর পাচ্ছে না অ্যান্ড্রু বালবির্নির দল। তাদের বদলে সুযোগ মিললো দক্ষিণ আফ্রিকার। আয়ারল্যান্ডকে তাই খেলতে হবে বাছাইপর্ব।
মঙ্গলবার চেমসফোর্ডে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় আইরিশরা। চেপে ধরে টাইগার বোলাররা। ইনিংসের শুরুতেই তুলে নেয় জোড়া উইকেট।
৩.৩ ওভারে দলীয় ২২ রানে ভাঙে আয়ারল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। আক্রমণাত্মক মেজাজে রান আনতে শুরু করা পল স্টার্লিংকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ভয়ংকর হতে থাকা এই ব্যাটার করেন ১০ বলে ১৫ রান।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে হাসান মাহমুদ ভাঙেন তিন নম্বরে নামা বালবির্নির উইকেট। ৯ বলে ৫ রান করেন সাজঘরে ফেরেন তিনি। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানো আইরিশরা ১৫.২ ওভারে দলীয় ৬৩ রানে হারায় আরো একটা উইকেট। তাইজুলের শিকার হয়ে ৩৯ বলে ১৭ রান করে ফেরেন স্টিফেন ডুহানি।
পরের ওভারেই বৃষ্টিতে থমকে যায় আইরিশদের ব্যাটিং। বৃষ্টি নামার আগে অবশ্য ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলে আয়ারল্যান্ড। জয়ের জন্য শেষ ২০১ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৮২ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট। এরপর বৃষ্টি থামলেও মাঠ খেলার উপযুক্ত ছিল না। আর আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসে ২০ ওভার খেলা না হওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি টেকে মাত্র ৪ বল। দলীয় প্রথম ওভারেই জশুয়া লিটিলের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন লিটন দাস। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। বিপরীতে ১৯ বলে ১৪ রান করে তামিম শিকার হন মার্ক অ্যাডাইরে। ৪ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ তখন মাত্র ১৫ রান।
১৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। দু’জনেই নিজের মতো খেলার চেষ্টায় রত থাকেন। কাউন্টার অ্যাটাকে চাপ সামলে ৪৭ বলের জুটিতে আনেন ৩৭ রান। সুবাদে পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশ সংগ্রহ পায় ২ উইকেটে ৫০ রান।
তবে পাওয়ার প্লে থেকে ফিরে পরের ওভারেই ফেরেন সাকিব। দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন তিনি। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংসটা তার থেমেছে ২১ বলে ২০ রানে। তার বিদায়ে ৫২ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশের, যা বিপদের মুখে ফেলে দেয় দলকে।
যদিও এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও তরুণ তাওহিদ হৃদয় চেষ্টা করছেন ইনিংস মেরামতের। তবে শেষ পর্যন্ত সাকিব-তামিমের দেখানো পথেই হাঁটেন দু’জনে। ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ উভয়েই। শুরু থেকেই এক প্রান্ত আগলে রাখা শান্ত যখন অশান্ত হতে শুরু করলেন, তখনই আউট হন তিনি। এর আগে অবশ্য খেলেন ৬৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।
ভালো শুরুর পরও তাওহিদ হৃদয় পূর্ণতা দিতে পারেননি ইনিংসটা, তুলতে পারেননি তৃপ্তির ঢেঁকুর। ৩১ বলে ২৭ রান করে ফেরেন তিনি। দলীয় সংগ্রহ তখন ২৬.৩ ওভারে ১২২/৫। তবে ৬৪ বলে ৫০ রান যোগ হয় দু’জনের জুটি থেকে। দলীয় ১০২ রানে শান্ত, আর আরো ২০ রান যোগ করে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়।
ততক্ষণে অবশ্য মাঠে নেমে গেছেন মুশফিকুর রহিম। পরের অধ্যায়টা একান্তই তার বলা যায়। মাসখানেক আগে আইরিশদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। অতঃপর যখন ফিরলেন, বলা যায় ৩৬তম জন্মদিনটা অনেকাংশেই রাঙিয়ে ফেলেছেন। খেলেন ৭০ বলে ৬১ রানের ইনিংস।
অবশ্য তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ভালো একটা প্রভাব রাখেন মেহেদী মিরাজ। তবে সাকিব-শান্তের মতো ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে মুশফিকের সাথে তার ৭০ বলে ৬১ রানের জুটিটিই লড়াইয়ে রাখে বাংলাদেশকে। মিরাজ ৩৪ বলে ২৭ রানে আউট হওয়ার পর তাইজুলের সাথে জুটি গড়েন মুশফিক। যেই জুটি ভাঙে ৪৫তম ওভারে মুশফিকের বিদায়েই, তবে ৪৫ বলে ৩৩ রান আসে সেখান থেকে।
শেষ দিকে তাইজুল ১৪ ও শরিফুল ১৬ রান করলে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডের জশুয়া লিটিল ৬১ রানে ৩টি ও মার্ক অ্যাডাইর ৪৪ রানে ২টি আর গ্রাহাম হুম ৩২ রানে নেন ২টি উইকেট।