জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে আরো বেশি শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে। আইসিসির ওয়েবসাইটে (icc.tv) ম্যাচটি সরাসরি দেখানো হবে।
প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২০ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে টাইগাররা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যেভাবে জয় পেয়েছে সেটা আধুনিক ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নিতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে দলকে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আগমনে পুরোপুরি বদলে যাওয়া ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে কিছু দিন ধরেই এক দিনের ক্রিকেটে কম বেশি ৩৫০ রানের কাছাকাছি স্কোর নিয়ে আলোচনা চলছিল বাংলাদেশ দলে।
শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু টার্গেট স্পর্শে আত্মবিশ্বাসী ছিলো দল। চতুর্থ উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তৌহিদ হৃদয়ের ১৩১ রানের জুটিতে জয়ের মঞ্চ পায় টাইগাররা।
দুই তরুণের ব্যাটে চড়ে জয় পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য ছিল বিশেষভাবেই আনন্দদায়ক। কারণ সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর দল বেশি নির্ভরশীল বলে মনে করা হয়। যদিও সিনিয়র ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতাও কাজে আসে। সাকিব আল হাসান ৩১ রান করেন এবং দলকে লড়াইয়ে রাখতে মুশফিকুর রহিমের সাথে ৬১ রানের জুটি গড়েন শান্ত। শেষ দিকে ২৮ বলে অপরাজিত ৩৬ রান করে বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেন মুশফিক।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, শান্তকে পরিণত দেখতে পাওয়া। দেশের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ ম্যাচেই দলের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু যখন খুব বেশি প্রয়োজন, ঠিক তখনই জ্বলে উঠে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত জয় এনে দিলেন শান্ত।
ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘আমি সেঞ্চুরির করার কথা ভাবছিলাম না। আমি শুধু বল দেখে খেলেছি এবং আমি জানি যদি ঠিকঠাক ব্যাট করতে পারি তাহলে সেঞ্চুরি করতে পারবো। আমি খুবই খুশি, কারণ এটি আমার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি এবং আমি যেভাবে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে করেছি। কিন্তু খেলা শেষ করে আসতে পারলে আমি আরো বেশি খুশি হতাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচক এবং কোচিং স্টাফদের মধ্যে আগে যারা রাসেলের (ডোমিঙ্গো) মতো ছিলেন তারা আমাকে অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং এটি সহায়ক হয়েছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমি মাত্র দু’টি ইনিংসে ভালো খেলেছি এবং যদি আমি এভাবে চালিয়ে যেতে পারি তা আমার এবং আমার দলের জন্য ভালো হবে।’
২৩ ম্যাচের ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। সতীর্থ হৃদয়কে কৃতিত্ব দিতে ভুলে যাননি তিনি। সর্বশেষ ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই অভিষেক হয়েছিলো হৃদয়ের।
শান্ত বলেন, ‘উইকেটে আসার পর হৃদয় যেভাবে ব্যাটিং করেছে এবং যে মনোভাব দেখিয়েছে সেটা আমাকেও সাহায্য করেছে এবং তাকে কখনো নার্ভাস দেখায়নি। আমরা যেই জুটি গড়েছি ও দলের প্রয়োজন মতো আমরা খেলতে চেয়েছিলাম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা ফলাফল নিয়ে ভাবছি না এবং আমাদের স্বাভাবিক খেলাটি খেলার চেষ্টা করেছি।’
শান্ত জানান, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবার লক্ষ্য বাংলাদেশের।
২০১০ সাল থেকে ওয়ানডেতে কখনোই বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। এরমধ্যে ১০টিতে জিতেছে এবং দুটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।
২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিজটাউনে প্রথমবারের দেখায় বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলো আয়ারল্যান্ড। ২০১০ সালে বেলফাস্টে শেষবার বাংলাদেশকে হারিয়েছিলো আইরিশরা।
বাংলাদেশ দল : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
আয়ারল্যান্ড দল : অ্যান্ড্রু বলবির্নি (অধিনায়ক), মার্ক অ্যাডায়ার, কার্টিস ক্যাম্পার, গ্যারেথ ডেলানি, জর্জ ডকরেল, স্টেফেন ডোহেনি, ফিওন হ্যান্ড, গ্রাহাম হুম, জশ লিটল, অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন, পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার ও ক্রেইগ ইয়ং।