করোনাভাইরাস মহামারি নিউইয়র্কে কেড়ে নিয়েছে ৮০ হাজার প্রাণ। আর যুক্তরাষ্ট্রে মোট মারা গেছে ১১ লাখ ৩০ হাজার। এত বিপুল মৃত্যুর ফলে কোভিড-১৯ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেও মানুষের জীবনের প্রতিটি বিভাগে এখনো এর নিষ্ঠুর ছাপ রয়ে গেছে।
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এর সময় নিউইয়র্ক রাজ্যে মারা গেছে ৮০,৪৮৫ জন। এদের প্রায় অর্ধেক নিউইয়র্ক সিটিতে।
করোনা মহামারির প্রাথমিক কেন্দ্র ছিল নিউইয়র্ক সিটি। তবে খুব দ্রুততার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা জরুরি অবস্থা বিরাজ করেছিল। এই সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় ১১ লাখ ২৭ হাজার ৯২৮ জন।
করোনা বিদায় নিয়েছে বলে সরকারি ঘোষণা সত্ত্বেও অনেক নির্বাচিত কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে প্রবীণ ও শারীরিকভাবে নাজুক লোকদেরকে কোভিড টিকা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছেন।
গভর্নর ক্যাথি হোকুল তার সর্বশেষ কোভিড আপডেটে বলেছেন, ‘যদিও ফেডারেল হেলথ ইমার্জেন্সির অবসান হয়েছে, তব্ওু আমি নিউইয়র্কের প্রতিটি অধিবাসীকে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলব এবং নিজেদেরকে, নিজেকের প্রিয়জনকে, সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে সম্ভব সকল হাতিয়ার ব্যবহার করতে অনুরোধ করব।’
তিনি বলেন, ‘টিকার ডোজে হালনাগাদ থাকুুন। আর সমাবেশে বা ভ্রমণে যাওয়ার আগে পরীক্ষা করিয়ে নিন। পরীক্ষায় পজেটিভ হলে সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।’
সিটি ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডা. আয়মান আল-মহানদেস বলেন, মহামারির অবসান হওয়ার ঘোষণা মানে এই নয় যে সবকিছু এখন ঠিক হয়ে গেছে। এখনো বিপুলসংখ্যক রোগী ‘লং কোভিডে’ ভুগছেন। এই রোগে ব্রেইন ফগ, শ্বাসকষ্ট, জৈবিক চাহিদা হ্রাস পাওয়া চুল পড়ে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যারা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মেডিক্যাল চেক-আপে যাচ্ছেন না, তাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অথচ সময়মতো চিকিৎসকের কাছে গেলে ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরেই বিষয়টি শনাক্ত হতো।
তিনি বলেন, ‘যাদের সুস্থ হতে সময় লাগে, তাদের প্রতি আমাদেরকে স্পর্শকাতর থাকতে হবে। তাদের জন্য মহামারি এখনো শেষ হয়নি।’
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশেষভাবে নিউইয়র্কের মানুষের জীবন পদ্ধতিকে শেষ করে দিয়েছে। ভীত লোকজন এই অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছে, চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
বিশেষ করে পশ্চাদপদ ও সংখ্যালঘুদের ওপর করোনা সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে।
করোনার টিকা ও ওষুধ আবিষ্কৃত হওয়ার আগে পর্যন্ত মৃত্যু ছিল অপ্রতিরোধ্য। বিশেষ করে বয়স্ক ও নাজুক লোকজন সর্বোচ্চ সংখ্যায় প্রাণ হারিয়েছে। নার্সিং হোমগুলো হয়ে পড়েছিল মৃত্যুপুরি।
এমনকি যেসব লোক তথা চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল স্টাফরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে ব্যাপক হারে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এই মহামারি থেকে যে শিক্ষা আমরা নিতে পারি তা হলো এই যে বৈশ্বিক যোগাযোগা ও তথ্য বিনিময় জোরদার করতে হবে। অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।