তখন বাংলার ক্রিকেট এতো বর্ণিল ছিলো না, ছিলো না রঙিন সব চরিত্র। বিলাসিতা তো বহুদূর, শুরুতে এদেশের ক্রিকেট ছিলো মলিন, রুগ্ন। বড় দগুলোর বিপক্ষে জয় তো দূর, একটা ম্যাচ খেলাও ছিল স্বপ্নসম। আর যদি কখনো জুটতো একটা জয় ভাগ্যে, তা দোলা দিত হৃদয়ে; দিতো বিশ্বজয়ের আনন্দ।
এমনি আনন্দমুখর একটা দিন এসেছিল আজ থেকে ঠিক দুই যুগ আগে, ১৯৯৯ সালের ৩০ মে। সেদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেখা হয়েছিল অবিস্মরণীয় এক গল্প, ২৪ বছর পর এসেও যা এদেশের ক্রিকেটে বড় উপলক্ষ। হবেই না বা কেন, প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে তারকা ঠাঁসা পাকিস্তানকে যে হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা!
সেদিন শুধুই একটা জয় পায়নি বাংলাদেশ, পেয়েছিল সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবার পাথেয়ও। যেই জয় খুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাবনার দ্বার, যেই জয় এনে দিয়েছিল ‘আমরাও পারি’ আত্মবিশ্বাসের সমাহার। অথচ খেলা শুরুর আগে ‘বাংলাদেশ জিততে পারে’ বললে যে কেউই হেসে উড়িয়ে দিতো, পাগল ডাকটাও হয়তো কপালে জুটে জেতো!
সেবার বিশ্বকাপ খেলা গড়িয়েছিল ক্রিকেটের তীর্থভূমি ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ড মানেই তো সাপের ন্যায় ফণা তোলা সুইংয়ের মরণ ছোবল। সেই সাথে প্রতিপক্ষ শিবিরে যখন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস ও শোয়েব আখতার, তখন পিলে চমকাতে কী লাগে আর! এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরবে কে? খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিলো নিশ্চিত হার!
সেদিন নর্দাম্পটনে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় টাইগাররা। শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করে বাংলাদেশ, উদ্বোধনী জুটিতে বিদ্যুৎ-অপি মিলে যোগ করেন ৬৯ রান। কিন্তু মাত্র এক রানের ব্যবধানে সাকালায়েন মুশতাকের জোড়া শিকার হয়ে বিদায় নেন দুই ওপেনার। চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে খেলার হাল ধরেন আকরাম খান। তার ৪২ ও শেষ দিকে খালেদ মাহমুদ সুজনের ২৭ রানে ভর করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। অবশ্য এই সম্মানজনক সংগ্রহের পেছনে পাকিস্তানি বোলারদের দেয়া অতিরিক্ত রান রেখেছে বড় ভূমিকা। যেখান থেকে আসে ৪০ রান।
পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপটাও কম ঈর্ষণীয় ছিল না। ছিলেন সাইদ আনোয়ার, শহীদ আফ্রিদি, ইনজামাম উল হক, মইন খানরা। তবুও মাত্র ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। যেখানে বড় ভূমিকা খালেদ মাহমুদ সুজনের। পাঁচের তিনটি উইকেটই যায় তার ঝুলিতে।
আজহার মাহমুদ ও ওয়াসিম আকরাম মিলে সেই বিপদ সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও পেরে উঠেননি, দলীয় ৯৭ রানে আজহার রানআউট হয়ে ফিরলে সেই প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে যায়। এরপর একটা করে পাকিস্তানের উইকেটের পতন হতে থাকে, আর বাংলাদেশও ইতিহাস গড়ার দিকে একধাপ এগিয়ে যেতে থাকে।
দলীয় ১৬১ রানে সাকলাইন মুশতাকের রানআউট হলে জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের। ৬২ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন খালেদ মাহমুদ সুজন। ব্যাট হাতে ২৭ রানের পর বল হাতে ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট। তাছাড়া ম্যাচে তিনটি রানআউটও করেন তিনি।
মুহূর্তের ব্যবধানে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারানোর সুখানুভূতি সুদূর নর্দাম্পটন থেকে বাংলাদেশে এসে ভীষণ এক নাড়া দিয়ে যায়। যা নাড়া দিচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, দুই যুগ পরে এসেও!