সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেলেই এগিয়ে চলে জীবন। তারকাদের জীবনকেও সেই দৃষ্টভঙ্গি থেকে দেখা হয়। চলতি বছরে বলিউড বাদশাহখ্যাত শাহরুখ খানের জীবনেও এসেছে সাফল্য, রয়েছে ব্যর্থতা। একদিকে তার অভিনীত ‘পাঠান’ বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাবে ‘জওয়ান’। আবার তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয় অধরা রয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শাহরুখের উপার্জনের রেখচিত্র কিন্তু ঊর্ধ্বগামী। একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, বলিউড বাদশাহ ছয় হাজার কোটি টাকার (ভারতীয় রুপি) সম্পত্তির অধিকারী। কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি তৈরি করলেন শাহরুখ?
প্রসঙ্গ সিনেমা
ইন্ডাস্ট্রিতে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন শাহরুখ। শুরু থেকে তার অভিনীত কয়েকটি ছবির দিকে তাকালে বোঝা যাবে, কিভাবে সময়ের সাথে শাহরুখ তার পারিশ্রমিক বেড়েছে। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় অভিনেতার প্রথম ছবি ‘দিওয়ানা’। ওই একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল ‘রাজু বন গয়া জেন্টেলম্যান’। এই ছবির জন্য বাদশার পারিশ্রমিক জানলে অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন। ‘রাজু…’র জন্য শাহরুখ পেয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা। এর পর শাহরুখের সব থেকে বড় ব্লকবাস্টার ছিল ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। সূত্র বলছে, এই ছবিতে শাহরুখের পারিশ্রমিক ছিল ৩০ লাখ টাকা। শাহরুখের সাম্প্রতিক ছবি ‘পাঠান’-এ পারিশ্রমিক এবং ছবি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের নিরিখে প্রযোজক যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। এই ছবির জন্য বাদশার পারিশ্রমিক ধার্য হয়েছে ২০০ কোটি টাকা (রুপি)!
সফল ‘ব্যবসায়ী’
সফল অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি শাহরুখ একজন দক্ষ ব্যবসায়ী। অভিনেতার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা এবং ভিএফএক্স কোম্পানি রয়েছে, যার নাম রেড চিলিজ এন্টারটেনমেন্ট। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, এই সংস্থার বর্তমান বাজার মূল্য ১০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও একটি জনপ্রিয় ছাত্র প্রশিক্ষণ অ্যাপেও বিনিয়োগ করেছেন শাহরুখ। একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্কেরও তিনি অংশীদার। এবারে আসা যাক তার সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রসঙ্গে।
আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ। এছাড়াও অভিনেতা দক্ষিণ আফ্রিকার টি টোয়েন্টি লিগের অন্তর্গত ‘কেট টাউন নাইট রাইডার্স’-এর মালিক। প্রত্যেক বছর, টি টোয়েন্টি লিগ থেকে এক বড় অংশের মুনাফা অর্জন করেন শাহরুখ। এখানেই শেষ নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানেও পারফর্ম করেন শাহরুখ। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, কোনো অনুষ্ঠানের অংশ হতে বা সেখানে পারফর্ম করার জন্য শাহরুখ তিন কোটি টাকা (রুপি) পারিশ্রমিক নেন।
বিজ্ঞাপনের মুখ
কেরিয়ারের শুরু থেকেই দেশের বিজ্ঞাপনে অন্যতম পছন্দের মুখ শাহরুখ খান। বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২টি দেশের প্রথম সারির পণ্য এবং পরিষেবার হয়ে প্রচার করেন শাহরুখ। প্রতি বিজ্ঞাপনে বাদশার পারিশ্রমিক ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
সঞ্চালকের আসনে
শাহরুখের রসবোধ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর অভিনেতার এই বিশেষ গুণই বিভিন্ন সময়ে তাকে ছোট পর্দায় বিভিন্ন শোয়ের সঞ্চালকের আসনে বসিয়েছে। জনপ্রিয় গেম শো ‘কওন বনেগা ক্রোড়পতি’র তৃতীয় সিজনের সঞ্চালক ছিলেন শাহরুখ। এ ছাড়াও তার ঝুলিতে ছিল ‘কেয়া আপ পাঁচয়ি পাস সে তেজ হ্যায়’ এবং ‘জোর কা ঝটকা’ রিয়্যালিটি শো। বিভিন্ন সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে কোননোশোয়ের অংশ হতে প্রতি এপিসোডে বাদশাহ আড়াই কোটি টাকা নিয়ে থাকেন।
মাধ্যম যখন সামাজিক
সময়ের সাথে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যম টিভির সঙ্গেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছে। শাহরুখও সেখানে পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য সমাজমাধ্যমে তিনি প্রচার করে থাকেন। ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে শাহরুখের ঈর্ষণীয় অনুসরণকারী যে কোনও বড় ব্র্যান্ডের কাছে পাখির চোখ। সূত্রের দাবি, কোনও ব্র্যান্ডের হয়ে শাহরুখ তার সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি পোস্ট করা জন্য ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন।
‘মান্নত’ ছাড়াও…
যেকোনো পর্যটকের কাছে প্রথম মুম্বই ভ্রমণ মানেই অন্যতম আকর্ষণ শাহরুখের বাড়ি ‘মান্নত’। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বান্দ্রার এই প্রাসাদোপম বাড়িটির বাজারদর ২০০ কোটি টাকা। মহারাষ্ট্রের আলিবাগে শাহরুখের নিজস্ব বাগানবাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটির দাম প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে। দেশের বাইরেও অভিনেতার একাধিক বাড়ি রয়েছে। যেমন দুবাইয়ের পাম জুমেইরাতে শাহরুখের একটি নিজস্ব বাড়ি রয়েছে, ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও লন্ডনে শাহরুখের একটি বাড়ি রয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় এই বাড়িটির বর্তমান বাজারদর ১৮৫ কোটি টাকা!
এবং বাহন
বলিউডের বাদশাহ মানে তার বাহনেও থাকবে রাজকীয় ছন্দ। একটি সূত্র দাবি করেছে, শাহরুখের গাড়িগুলোর মোট দাম প্রায় ৩১ কোটি টাকা (রুপি)। কী নেই তার কাছে। শাহরুখের মালিকানায় একটি করে বিএমডব্লিউ, অডি, মার্সেডিজ, ল্যান্ড ক্রুজ়ার, বেন্টলি, রেঞ্জরোভার। এরই সঙ্গে ‘পাঠান’-এর সাফল্যের পর অভিনেতা নিজের জন্য একটি রোলস্ রয়েজ কালিনান ব্ল্যাক ব্যাজ কিনেছেন। আর এই গাড়িটির দাম অন্তত ১০ কোটি রুপি!
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা