বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত: ফরহাদ মজহার চলতি মাসে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়, রয়েছে বন্যার শঙ্কাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে যা জানালেন ড. ইউনূস খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা, ১৪৪ ধারা জারি জুলাই-আগস্টে ঋণ গ্রহণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ অশ্লীলতা না থাকলে ,আইটেম গানে নাচবেন অনন্যা ২০ হাজার বাংলাদেশীর পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ভারত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত : র‌্যাবকে সরিয়ে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ চট্টগ্রাম বন্দরের তেলবাহী ট্যাংকারে আগুন, নিখোঁজ ৩ প্রধান উপদেষ্টার বাড়ির সামনে ৩৫ প্রত্যাশীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ

খেলার দুনিয়ার নতুন গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩
  • ৪২ বার

খেলার দুনিয়ার নতুন গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। ফুটবল, ক্রিকেট, গল্‌ফ, রাগবি, ফর্মুলা ওয়ান। তালিকা দৈর্ঘ্যে বাড়ছে। টাকার থলি নিয়ে ছুটছেন আরব দেশগুলোর ধনকূবেররা। বিনিয়োগ করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার। এতে চিরচেনা ছক পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর খেলার দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় ক্রীড়া জগতের অনেকে শঙ্কিত। অনেকে আশাবাদীও। কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের পর থেকে ক্রীড়া জগতে আলোচনার অন্যতম বিষয় মধ্যপ্রাচ্য। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেঞ্জেমারা সই করছেন সৌদি আরবের ক্লাবে। লিওনেল মেসির পিছনেও টাকার থলি নিয়ে ছুটেছে সৌদির ক্লাব আল হিলাল। আগামী দিনে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করতে আগ্রহী সৌদি। কাতার বিশ্বকাপের সাফল্যই কি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আগ্রহ বাড়িয়েছে?

একদমই তা নয়। ক্রীড়া জগতে শেখদের উৎসাহ হঠাৎ নয়। একটু পিছনে দিকে তাকালে বোঝা যাবে, গত দু’দশক ধরে ধীরে ধীরে এগিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। ২০০৪ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরিকল্পনা করা হয় ৫০ কোটি বর্গ ফুটের দুবাই স্পোর্টস সিটির। লক্ষ্য ছিল, বিশ্বের সব জনপ্রিয় খেলাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। বিভিন্ন খেলার বিশ্ব নিয়ামক সংস্থার সদর দফতরকে এক জায়গা নিয়ে আসা। আমিরাতের ডাকে প্রথম সাড়া দিয়েছিল ক্রিকেট। লন্ডনে ৯৬ বছরের ‘ভাড়া বাড়ি’ লর্ডস ছেড়ে দুবাইয়ে সদর দফতর সরিয়ে এনেছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি। ২০০৫ সাল থেকে আইসিসির সদর দফতর দুবাইয়ে। দুবাই স্পোর্টস সিটিতে রয়েছে ২৫ হাজার দর্শকাসনের ক্রিকেট স্টেডিয়াম। রয়েছে আইসিসির আধুনিক ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। যেখানে প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের জন্য রয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মতো পিচ।

মুখ ফিরিয়ে থাকেনি অন্য খেলাও। স্পেনের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা গড়ে তুলেছে সকার স্কুল। রয়েছে পাঁচ হাজার আসনের রাগবি স্টেডিয়াম। রয়েছে গল্‌ফ স্কোর। রয়েছে ১০ হাজার আসনের ইন্ডোর স্টেডিয়াম। যেখানে টেনিস, বাস্কেটবল, সাইক্লিং, এবং আইস হকি খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। দুবাই স্পোর্টস সিটিতে রয়েছে বিভিন্ন খেলার শিক্ষার্থী, খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি (কিছু ক্ষেত্রে আম্পায়ার) এবং কর্তাদের সব রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

আরব দেশগুলো শুধু যে নিজেদের ঘরেই ডেকেছে ক্রীড়া বিশ্বকে, তা নয়। ঘরের বাইরেও পা ফেলেছে। প্যারিস সঁ জরমঁ কিনেছেন কাতারের ব্যবসায়ী নাসের আল খেলাইফি। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মালিক খালদুন আল মুবারক আমিরশাহির ব্যবসায়ী। নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের মালিকানা রয়েছে সৌদির এক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে। অ্যাস্টন ভিলার মালিক মিসরের ব্যবসায়ী নাসেফ সাওয়ারিস। শেফিল্ড ইউনাইটেডে বিনিয়োগ করেছেন সৌদির যুবরাজ আব্দুল্লাহ বিন মোসাদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। মধ্যপ্রাচ্যের রাজ পরিবারগুলোর হাতে রয়েছে ইউরোপের সাতটি ক্লাবের মালিকানা।

খনিজ তেলের ভাণ্ডার আরব দেশগুলোতে টাকা দেয়ার লোকের অভাব নেই। কোনো পরিকল্পনা রূপায়নের অর্থ সংস্থানের জন্য ভাবতে হয় না। বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে এসে তাক লাগানো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, দক্ষতায় না হলেও পরিকাঠামোর দিক থেকে ইউরোপ বা আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর সাথে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারে আরব দুনিয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও গিয়েছে তারা। আরব দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও নিজেদের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, একটি দেশ বা জাতি আর্থ-সামাজিকভাবে কতটা উন্নত তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের ক্রীড়া সংস্কৃতি থেকে। মানব জীবনের ন্যূনতম চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, পরিকাঠামো- এ সব পূরণ হলে সংশ্লিষ্ট দেশ বা জাতি উন্নত ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের পর সামর্থ্য থাকলে তারা বিনোদন বা ক্রীড়ায় বিনিয়োগ করে। আরব দেশগুলোর রক্ষণশীল সমাজ পশ্চিমী বিনোদনের বিরোধী। আরব দেশের ধনকূবেররা তাই খেলাধূলাকেই বিনোদন হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তারা ছুটছেন প্রথম সারির ফুটবল ক্লাবগুলো কেনার জন্য। টাকার থলি নিয়ে ছুটছেন রোনালদো, মেসিদের পিছনে। সব ক্ষেত্রে সাফল্য না এলেও চেষ্টায় খামতি রাখছেন না তারা।

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে কাতার। ফর্মুলা ওয়ানের আসর বসছে আবু ধাবিতে। গল্‌ফেও শেখদের অর্থ শক্তির কাছে হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকার পিজিএ ট্যুর এবং ইউরোপীয় ট্যুর। সৌদি আরবের এলআইভি ট্যুরের সাথে গত সপ্তাহে হঠাৎ মিশে গিয়েছে গল্‌ফ দুনিয়ার দুই সেরা ট্যুর। অথচ সৌদির এলআইভি ট্যুরের জন্ম মাত্র দু’বছর আগে। গল্‌ফের এশিয়া ট্যুরেও আরব দুনিয়ার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। স্বভাবতই আগামী দিনে এশিয়া ট্যুরের মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।

তিনটি প্রধান ট্যুর একসাথে মিশে যাওয়ায় কতটা ভালো হলো গল্‌ফের? প্রশ্ন উঠছে। বিশ্বের প্রথম সারির গল্‌ফ খেলোয়াড়দের প্রায় সকলেই বিস্মিত। তারা কেউ জানতেন না এমন পরিণতির কথা। ভারতের অন্যতম সেরা গল্‌ফ খেলোয়াড় শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়াও আশা করেননি এত তাড়াতাড়ি মিশে যেতে পারে তিনটি ট্যুর। আনন্দবাজার অনলাইনকে শিবশঙ্কর বললেন, ‘তিনটি ট্যুরকে এক দিন হাত মেলাতেই হত। সেটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবিনি। ঝগড়া, লড়াই করে কত দিন চলা যায়? তাতে কি ভালো কিছু হয়? ঝগড়া কবে কার কবে লাভ হয়েছে?’ এতে গল্‌ফের কি ভালো হবে? শিবশঙ্কর বলেছেন, ‘ভালোই হবে। খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। সেরা খেলোয়াড়েরা সব জায়গায় খেলতে পারবেন। একটা বিষয় অবশ্য রয়েছে। তিনটি ট্যুর মিশে যাওয়ার পর সেগুলো কিভাবে পরিচালিত হবে, সেটা আমরা জানি না। পরিচালিত হওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’

শিবশঙ্কর আশাবাদী। ভালো পারফরম্যান্স করতে পারলে সব দেশের খেলোয়াড়েরা বিশ্বের সেরাদের সাথে খেলার সুযোগ পাবেন। তাতে লাভ হতে পারে ভারতীয়দেরও। কেমন সেই লাভ? শিবশঙ্কর বলেছেন, ‘আমার বা আপনার বাড়ির ছোটদের কারো আগামী দিনে খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে। যে খেলাই হোক। গল্‌ফ হতে পারে, ফুটবল, ক্রিকেটও হতে পারে। ভালো পারফরম্যান্স করলে আরব দেশগুলো থেকে ডাক পেতে পারে। তাতে সেরা খেলোয়াড়দের সাথে খেলার সুযোগ পাবে। তা ছাড়া আয় বাড়বে। পেশাদার খেলোয়াড়েরা খেলেই আয় করে। আরব দেশগুলো খেলায় প্রচুর বিনিয়োগ করছে। ভালো পুরস্কার মূল্য দিচ্ছে। সব থেকে বড় সুবিধা হলো ওরা পুরস্কার মূল্যের উপর কর নেয় না। ফলে পুরো টাকাটাই পাওয়া যায়। আমরা যেখানে সেরা সুযোগ-সুবিধা পাব, সেখানেই খেলতে যাব। আমি অন্তত সমস্যা দেখছি না।’ তার আরও যুক্তি, ‘পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়েরা তো বিদেশের ক্লাবে খেলেন। তা হলে মধ্যপ্রাচ্যে নয় কেন? রোনালদোর মতো পেশাদার খেলোয়াড় এসেছেন। ভালো মনে না করলে কি আসতেন?’

ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, রাগবি, গল্‌ফ, ফর্মুলা ওয়ানের মতো খেলাগুলোতে বিপুল বিনিয়োগ করছে আরব দুনিয়া। বেছে নেয়া হচ্ছে মূলত বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয় এবং ব্যবসায়িক লাভজনক খেলাগুলিকে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিশ্বের সর্বত্র নিজেদের উপস্থিতি, প্রভাব নিশ্চিত করা। সে জন্য নিজেদের সংস্কৃতি জলাঞ্জলি দিতে রাজি নয় তারা। গত ফুটবল বিশ্বকাপেই কাতারের রাজার নির্দেশে স্টেডিয়ামগুলিতে বিয়ার বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ফিফার অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংস্থার স্বার্থে আঘাত লাগলেও মেনে নিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। কার্যত বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়া হয়েছে আর্থিক ক্ষতিও।

ক্রীড়া বিশ্বে ক্রমশ লম্বা হচ্ছে আরব দুনিয়ার ছায়া। ইউরোপের কিছু দেশ বা আমেরিকার দীর্ঘ দিনের একচ্ছত্র দাপট ধাক্কা খাচ্ছে এশিয়ার সীমানায়। খেলার মাঠে চীনের মতো সাফল্য হয়তো এখনো পাচ্ছেন না আরব দেশের খেলোয়াড়েরা। এশীয় মানে কিছু ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে শুরু করলেও বিশ্ব পর্যায় এখনো পিছিয়ে রয়েছেন তারা। গত কয়েকটি অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমসের পদক তালিকায় চোখ রাখলেই তা বোঝা যায়। টোকিওঅলিম্পিক্সে পদকের হিসাবে আরব দুনিয়ার সফলতম দেশ ছিল ইরান। তিনটি সোনা, দুটি রুপা এবং দুটি ব্রোঞ্জ নিয়ে তারা ছিল ২৭ নম্বরে। গত এশিয়ান গেমসেও সফলতম দেশ ছিল ইরান। ২০টি সোনা, ২০টি রুপা এবং ২২টি ব্রোঞ্জ জিতে তারা শেষ করে ছিল ষষ্ঠ স্থানে। মোট পদক সংখ্যায় অষ্টম স্থান পাওয়া ভারতের (৬৯টি) থেকে সাতটি কম ছিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সৌদি আরব মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমক দেখালেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সার্বিক ফলাফল আহামরি নয়।

মাঠের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও খেলার দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। খনিজ তেলের বিপুল লভ্যাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে খেলায়। ফলাফল যাই হোক! লাভবান হচ্ছেন খেলোয়াড়েরা। লাভবান হচ্ছে ক্রীড়া নিয়ামক সংস্থাগুলো। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনীতির প্রবল মন্দার ধাক্কা সামাল দিতে খেলার মাঠ থেকে ইউরোপ, আমেরিকার একের পর এক বহুজাতিক সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের ধনকূবেরেরা। ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতে শুরু করেন তারা। অর্থ সঙ্কটে থাকা ক্রীড়া নিয়ামক সংস্থাগুলোও অর্থ লাভের এই সুযোগকে পায়ে ঠেলেনি।

সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরব দেশগুলো ব্যবসার পাশাপাশি প্রভাবও বাড়িয়েছে। খেলার মাঠ রাস্তা দেখিয়েছে তাদের। বিলাস বহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত শেখদের শখ এখন খেলায় বিনিয়োগ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com