মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী মুসলিম বিচারক হয়েছেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরী। এখন থেকে নিউ ইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় আদালত (ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট)-এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
নুসরাত পেশায় আমেরিকার সিভিল রাইটস আইনজীবী। নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করেন তিনি। বৃহস্পতিবার আমেরিকার সিনেট ও দেশের প্রথম নারী মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে।
৫০-৪৯ ভোটে জেতার পর নিউ ইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় আদালতের বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন নুসরাত।
নুসরাত বর্তমানে ইলিনয়ের ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’-এর আইনি অধিকর্তা (লিগ্যাল ডিরেক্টর) হিসেবে কর্মরত।
নুসরাত তার পেশাদার জীবনের বেশির ভাগ সময় এসিএলইউ-তে কাটিয়েছেন। যেখানে তিনি বর্ণবৈষম্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত এসিএলইউ-এর বর্ণবৈষম্য-সংক্রান্ত বিচার কর্মসূচির ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন নুসরাত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফেডারেল বেঞ্চে নুসরাতের নাম মনোনীত করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আমেরিকার শীর্ষ সিনেট চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নুসরাত প্রতিভাবান আইনজীবী। নাগরিক অধিকার আইনজীবী হিসাবে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফেডারেল বেঞ্চে সততা এবং পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার জন্য তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। নুসোত নিশ্চয়ই সৎপথে থেকে এবং সত্যকে অনুসরণ করে ন্যায়বিচার করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে শুমার টুইটারে নুসরতের একটি ছবি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘নুসরাত এসিএলইউ-র আইনি পরিচালক। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নুসরাত আমেরিকার প্রথম নারী মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসাবে ইতিহাস গড়েছেন।’
ট্রাম্প জমানায় বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন নুসরাত। ২০১৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি দিন ‘খুন’ করছে পুলিশ। তার এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক তৈরি হয়।
সেনেটের কয়েকজন সদস্য নুসরাতের মন্তব্যকে অসংবেদনশীল আখ্যা দেন এবং বিরোধিতা করেন। পরে অবশ্য তিনি সিনেট কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানান, আইনের প্রতি তার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।
ফেডারেল বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে নুসরাত ‘নিউ ইয়র্ক ট্রায়াল কোর্ট’ এবং ‘ইউএস সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট অফ আপিল’-এর বিচারকের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
তবে নুসরাত প্রথম নন, বাইডেন জমানাতেই আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মুসলিম বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিচারক জাহিদ কুরেশি। ২০২১ সালে নিউ জার্সির ফেডারেল ট্রায়াল কোর্টে তাকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ করেছিল সেনেট।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৭ বয়সী নুসরাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সটন কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এর পর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কর্মজীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত। তিনি নিউ ইয়র্কের সাউথ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ ‘জাস্টিস অ্যাওয়ার্ড’ এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ‘এডওয়ার্ড বুলার্ড ডিস্টিংগুইশড অ্যালামনাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।
নুসরাতের বাবা এক জন চিকিৎসক। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি শিকাগো এলাকায় চিকিৎসা করেছেন।
২০১৬ সালে মাইকেল অর্লি নামে এক ভিএফএক্স শিল্পীকে বিয়ে করেন নুসরাত।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা