রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন

মাসায়েলে কোরবানি

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩
  • ৭০ বার

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিলের এক অনন্য উপায়। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সা: মদিনায় হিজরতের পর প্রতি বছর কোরবানি করেছেন এবং যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। অতএব, আমাদের যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্য দান করছেন, আমাদের উচিত কোরবানি করা।
কোরবানির পরিচয় : কোরবানি শব্দটি আরবি। একে আরবিতে উজহিয়াহ বলা হয়। অর্থ- উৎসর্গ করা, জবাই করা। পরিভাষায়, নির্দিষ্ট প্রাণী নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য জবাই করাকে কোরবানি বলে। (শরহে বেকায়াহ, উমদাতুর রিয়ায়া, নেহায়া, কামুসুল ফিকহি)

কোরবানির হুকুম : ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম জুফার, ইমাম হাসান, ইমাম কুদুরির মতে, সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি করা ওয়াজিব। (শরহে বেকায়া, পৃষ্ঠা-৪৭৩)

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত : মুসলিম, স্বাধীন, মুকিম, নিসাব পরিমাণ সম্পদ তথা (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা)-এর মালিক হওয়া। (হেদায়া, শরহে বেকায়া)
যেসব প্রাণী দিয়ে কোরবানি বৈধ : ওলামায় কেরামের মতে- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া। এই ছয়টি প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা বৈধ।

কোরবানির পশুর বয়স : উট পাঁচ বছর, গরু-মহিষ দুই বছর, ছাগল এক বছর। দুম্বা, ভেড়া ছয় মাসেরটা দেখতে এক বছরের মতো হলে তা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে। ওই বয়সের এক দিন কম হলেও কোরবানি হবে না। (শরহে বেকায়া)
যেসব প্রাণী দিয়ে কোরবানি জায়েজ নেই : ১. দুই চোখ অথবা এক চোখ অন্ধ; ২. নেংড়া-খোঁড়া পশু যা কোরবানির স্থানে হেঁটে যেতে পারে না; ৩. দুর্বল, দাঁতহীন, কানহীন; ৪. স্তনের বোঁটা কাটা, কান কাটা, পা-কাটা, লেজ কাটা।
কোরবানির অংশীদার : একা কোরবানি দেয়া উত্তম। শরিকে দিলে উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত শরিক এবং ছাগল, দুম্বা, ভেড়া সর্বোচ্চ এক শরিক দিতে পারবে। (ফাতাওয়া কাজিখান-৩/৩৪৯)

শরিক নির্বাচন : একাধিক মানুষ একত্রে কোরবানি করতে চাইলে সর্বপ্রথম আসে শরিক নির্বাচন করা। কোনো শরিকের উদ্দেশ্য খারাপ থাকলে যেমনিভাবে তার নিজের কোরবানি নষ্ট হবে তেমনিভাবে অন্যদের কোরবানিও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শরিকি কোরবানিতে আগে শরিকদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া উচিত, যাতে কোরবানি সহিহ শুদ্ধভাবে আদায় হয়। পশু ক্রয়ের পর অংশীদার গ্রহণ করা মাকরুহ। (আল ইখতিয়ার-৫/১৮)
শরিকানা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মাসয়ালা : ১. এক গরু, মহিষ বা উটে নফল, ওয়াজিব ও মান্নতের কোরবানি করা যাবে। তবে উত্তম হলো সবার নিয়ত অভিন্ন হওয়া।

(বাদায়ে উস সানায়ে-৪/২০৯)
২. কোরবানির পশুতে আকিকার নিয়তে কোনো ভাগ নিলে কোরবানিও আদায় হবে আকিকাও আদায় হবে। (বিদায়ে উস সানায়ে-৫/৭২)
৩. কোরবানির পশুতে ওলিমা ও সুন্নতে খৎনার উদ্দেশ্যে কোনো অংশ নেয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার)
কোরবানি করার সময় : ইমাম আবু হানিফা, জমহুর ওলামায় কেরামের মতে, ঈদের সালাতের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে কোরবানি করল সে যেন নিজের জন্য করল আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পরে করল সে যেন আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য করল।’ (শরহে বেকায়া)
কোরবানির শেষ সময় : ইমান আবু হানিফা, মালেকের মতে- কোরবানির শেষ সময় ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (শরহে বেকায়া)

কোরবানির গোশতের বিধান : কোরবানির গোশত তিন ভাগ করা মুস্তাহাব- এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য ও এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য।

কোরবানির গোশত বিক্রি করা হারাম। (শরহে বেকায়া) ইমাম আবু হানিফার মতে, কোরবানির গোশত পাল্লা দিয়ে মেপে বণ্টন করতে হবে, অনুমান করে বণ্টন করা হারাম। (আল জাওহারাতুন নায়িরাহ-২/৩২৮)
কোরবানির চামড়ার বিধান : চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়া দিতে পারবে, তবে যদি চামড়া বিক্রি করে তাহলে এই টাকা গরিব মিসকিনকে দিতে হবে। (হেদায়া)

লেখক :

  • কে এম ছালেহ আহমদ জাহেরি

খতিব, জিরুআইশ হাজীবাড়ি ছালেহিয়া জামে মসজিদ, চান্দিনা, কুমিল্লা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com