ফোবানা নামের সংগঠনটি নর্থ আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রে এখন বিভক্তের মডেল হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। সংগঠনটি হবার কথা ছিল প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। তা এখন অনৈক্য ও বিভেদের মডেল। ভাংগতে ভাংগতে তা এসে দাঁড়ালো ৬ টুকরোতে। এতও দিন ছিল ৩ ভাগে বিভক্ত। এখন তা ৬টি শাখায় প্রসারিত হচ্ছে! সবচেয়ে বড় ফোবানা ছিল গিয়াস আহমেদ, শাহ নেওয়াজ, আলী ইমাম, এজাজ তৌফিক,মোহাম্মদ হোসেন, ফিরোজ, কাজি আজম, ডা. মাসুদুর রহমান ও শরাফত হোসেন বাবুদের নেতৃত্বাধীন অংশটি। কিন্তু তা এখন কার্যত ৩ ভাগে বিভক্ত হবার উপক্রম। শরাফত হোসেন বাবু ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে আসন্ন সেপ্টেম্বরে ফোবানা সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন। শাহ নেওয়াজ, আলী ইমাম শিকদার ও কাজি আজমরা নতুন একটি স্টেয়ারিং কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর গিয়াস আহমেদ ও ডা. মাসুদুর রহমানরা এক সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা কমিটি প্রকাশ করেছেন। তবে এ অংশের মেম্বার সেক্রেটারি হিসেবে তারা এখনও শাহ নেওয়াজকে উল্লেখ করেছেন। তা কোন কাজে দিবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শাহ নেওয়াজ ও গিয়াস আহমদের নেতৃত্বাধীন উভয় অংশই পৃথক পৃথকভাব্ েফোবানা সম্মেলন করবেন কানাডার টরেন্টো শহরে একই দিনে। এই বিভক্তিতে নর্থ আমেরিকার বাংলাদেশি কমিউিনিটি ক্ষুব্ধ। তারা প্রচন্ডভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ফোবানা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে।
টরেন্টো ফোবানা অনুষ্ঠানের (শাহ নেওয়াজ) জন্য আবুল আজাদ আহবায়ক , বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া চেয়াম্যান ও নজরুল ইসলাম মিন্টু প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হলেন। গত ৮ জুলাই রোববার কানাডার টরেন্টো শহরের ড্যানফোর্থস্থ আলমানী রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আবুল আজাদের পরিচালনায় এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির এক্সিকিউটিভ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ,সহসভাপতি কাজি আজম,সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান সভাপতিমোহাম্মদ হোসেন খান ও সদস্য নিশান রহিম । সভায় স্টিয়ারিং কমিটি টরেন্টো শহরে ৩৭তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য আহবায়ক আবুল আজাদাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি হস্তান্তর করেন এক্সিিিকউটিভ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ।
মত বিনিময় সভায় আরও অংশ নেন ১৪তম ফোবানার আহবায়ক মাহবুব রব চৌধুরী,জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.জসিম উদ্দীন আহমেদ, বাবুল চৌধুরী, এডভোকেট অদিয়া বেগম,মার্জিয়া হক ও শহিদুল হক। উল্লেখ্য আগামী ১-৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ টরোন্টো শহরে ৩৭ ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ফোবানা অপর অংশের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ ব্যাড এলিমেন্টদের ফোবানা থেকে বের করে দেবার ইঙ্গিত দিলেন। এদের মধ্যে আলী ইমাম শিকদার ও কাজি আজম রয়েছেন। সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি ফোবানা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের বিভিন্ন ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্টিয়ারিং কমিটির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি শাহ নেওয়াজ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন। তিনি মোহাম্মদ হোসেন, কাজি আজম ও আলী ইমামদের হাতে বন্দী। এই ৩ জনের কারনেই ফোবানা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। শাহ ওেয়াজ গাডর্স নিয়ে কাজ করতে পারেন না। ১-৩ সেপ্টেম্বর কানাডার টরেন্টো শহরের শেরাটন হোটেলে আরেকটি ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এটির সাথে শাহ নেওয়াজদের সম্মেলনের কোন সম্পর্ক নেই।
গত শনিবার জ্যাকসন হাইটস্থ নবান্ন পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাসুদুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ এনায়েত আলী, এলিন রহমান, মফিজ ভূইয়া ও শাহাদত হোসেন রাজু।
সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদ বলেন, শাহ নেওয়াজদের সাথে মিলে যাওয়ার এখনও সম্ভাবনা রয়েছে। সবশেষে টরেন্টোতে একটি ফোবানা হলেও হতে পারে।
এদিকে জাকারিয়া চৌধুরী , বেদারুল ইসলাম বাবলা, আতিকুর রহমান ও শাহেদা শিকদার হাই এর নেতৃত্বাধীন অংশের ফোবানা হচ্ছে কানাডার মনিট্রয়লে। টেক্সাসের ডালাসে অনুষ্ঠিত হবে রেহান রেজা, আহসান চৌধুরী,মাসুদ রব চৌধুরী,নাহিদ খান ও আবীর আলমগীরদের নেতৃত্বাধীন অংশের। সবগুলো ফোবানা সম্মেলনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১-৩ সেপ্টেম্বর লেবার ডে উইকেন্ডে।
উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের ঐক্য আর সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন দশক আগে ফেডারেশন অব বালাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা বা ফোবানা নামের সংগঠনটি সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। হাওর-নদী-সাগর পাড়ি দেওয়া স্বদেশিদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফোবানা তার যাত্রা শুরু করে। ফোবানা সম্মেলন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আনন্দ অভিযাত্রার তিলক হয়ে উঠে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই সম্মেলনে অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। আমেরিকা ও কানাডার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা যেমন ছুটে আসতেন, তেমনি ইউরোপ থেকে অতিথিরা এসে যোগ দিতেন এই সম্মেলনে। নেতৃত্ব আর দখলদারির কবলে পড়ে আজ জৌলুষ হারিয়েছে ফোবানা। একই নামে আমেরিকার একাধিক শহরে ফোবানা সম্মেলন হচ্ছে। টানাপোড়েনের কারণে প্রবাসীদের ফোবানার প্রতি আগের সেই আবেদন আর নেই। তারপরও ফোবানার নাম শুনলে প্রবাসের লোকজন শিহরিত হোন। স্বপ্ন দেখেন, দূর দেশে নিজেদের ঐক্য আর সংহতির।