রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা পালন

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
  • ৬৪ বার

সর্বস্তরে ও সদাসর্বদা সুখ-শান্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক সংখ্যক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপের কারণ। আর তোমরা অন্যের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু (সূরা আল-হুজরাত: ১২)। আলোচ্য আল্লাহর বাণী হতে শিখনীয়, স্মরণীয়, পালনীয় এবং বর্জনীয় তিনটি বিশেষ কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হয়েছে তন্মধ্যে একটি করণীয় ও দু’টি বর্জনীয় যথা :

১. করণীয়- যথাসম্ভব অন্যদের ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করা হতে বিরত থাকা। আমার এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা অন্যের সম্পর্কে হতে পারে যা আমার পাপের কারণ। তাছাড়া হতে পারে নানাবিধ কুফল পারিবারিক সামাজিক এমনকি জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত হতে থাকে এবং সৃষ্টি হয় অশান্তি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, বিবাদ, হিংসাবিদ্ধেষ ইত্যাদি। অনেক ধারণা অন্যের সম্পর্কে হতে পারে পাপের কারণ যথা একজন সৎ লোককে অসৎ বা একজন চরিত্রবান লোককে চরিত্রহীন মনে করা হয়। কাজেই অন্যের সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা হতে আমাদেরকে বিরত থাকতেই হবে আমাদেরই ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে।

২. বর্জনীয়- অন্যের দোষত্রুটি বা দুর্বলতা খুঁজে খুঁজে (গোপনে বা অন্যথায়) প্রকাশ্যে আনা বর্জন করতে হবে। এক কথায় যাকে বলে ছিদ্রান্বেষণ। মানুষ মূলত দুর্বল তারা সহজেই দোষত্রুটির শিকার হয়ে যায়। দয়ালু আল্লাহ পছন্দ করেন তার সৃষ্ট মানবজাতি বিশেষ করে মুমিন-মুসলিমগণের দোষত্রুটি গোপন রাখা কারণ আল্লাহর অন্যতম গুণবাচক নাম ‘সাত্তার’ অর্থ : ‘গোলামগণের দোষত্রুটি গোপনকারী’। আল্লাহ পাক পছন্দ করেন তার গোলামগণকে তার গুণে গুণান্বিত করতে ও হতে।

৩. বর্জনীয়- অন্যের গিবত বা দোষত্রুটি তার অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে প্রকাশ করা যা জানলে সে আঘাত পেতে পারে, এ ধরনের দোষ বলা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এই জাতীয় স্বভাব বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন গিবত করা মানে মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা যা কেউ পছন্দ করতেই পারে না। আমাদের রাসূল সা: বলেছেন গিবত ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। ব্যভিচারের ক্ষমা আল্লাহর কাছে, তিনি ইচ্ছা করলে যেকোনো ব্যভিচারিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু গিবতকারীর ক্ষমা যার গিবত করা হয়েছে তার হাতে, সে ক্ষমা না করলে গিবতকারী কিছুতেই ক্ষমা পাবে না। তাছাড়া সে খাচ্ছে মৃত ভাইয়ের গোশত।

হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে? সাহাবিগণ রা: বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: ভালো জানেন।’ রাসূল সা: বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমি যে দোষের কথা বলি, সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও গিবত হবে?’ রাসূল সা: বললেন, ‘তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার গিবত করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে’ (মুসলিম, মিশকাত)।

রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন’ (তিরমিজি)। আলোচ্য হাদিসটি কত উঁচুস্তরের উৎসাহব্যঞ্জক এবং শান্তির ধারক ও বাহক ভাইয়ের মান সম্মান রক্ষা করা শান্তির কারণ বটে রক্ষাকারী মানসিক শান্তি পাবে ইহকালে এবং পরিপূর্ণ শান্তি পাবে পরকালের জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে।

হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখমণ্ডলে ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল আ: বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গিবত ও চোগলখোরি করত ও ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলত’ (আবু দাউদ শরিফ-৪৮৭৯)।

হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম সা: বলেছেন, ‘দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে, অর্থাৎ গিবত করবে, কিয়ামতের দিন গিবতকারীকে পচা গোশত ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে’ (বুখারি শরিফ)।

আমাদের স্মরণীয়, শিখনীয় এবং পালনীয়, ১. আমরা অন্যের সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকব ২. কারো দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াব না বা ছিদ্রান্বেষী হবো না ৩. কারো গিবত করব না।

লেখক :

  • মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ

সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com