গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদকে সংবর্ধনা দিয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলাবাসী। সম্প্রতি উপজেলার আলীগঞ্জ বাজারে অন্ুিষ্ঠত ওই সংবর্ধনায় স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
প্রসংঙ্গত, ভিয়েতনাম থেকে নাইট অফ সেন্ট জন অফ জেরুজালেম উপাধিতে ভূষিত হওয়ার পর সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে যান।
সংবধনা সভায় উপস্থিত সিলেট বিভাগের তৃণমূল মানুষের উদ্দেশ্যে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা সবাই এক দেশের এক পরিবারের মানুষ। আমাদের এখানে শুয়ে আছেন, হযরত শাহজালাল (র.) সহ তার সঙ্গীয় ৩৬০জন ধর্ম প্রচারক। তারা আমাদেরকে যে নৈতিকতা শিখিয়েছেন, তার প্রথমটাই হচ্ছে ভালোবাসা। তাদের সেই শিক্ষাই আজ এই ভূমির সাধারণ মানুষ অনুসরণ করেছে। এই জন্য আপনারা সেরা মানুষ। কেবল ডিগ্রি থাকলেই শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে যায় না। অনেক বড় বড় ডিগ্রি অর্জন ও অনেক ক্ষমতা পাবার পরও গ্রামের মানুষের মতো এই চেতনা অর্জন করতে পারে না। আপনাদেরকে ভালোবাসা ও আত্ম মর্যাদাবোধে কেউ উদ্বুদ্ধ করেনি, আপনারা জন্ম থেকেই এই শক্তি লাভ করেছেন, সেটিই অনুশীলন করে চলেছেন। কবীর মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আবু বকর, রফিক মিয়া ও হাজী মোখলেসুর রহমান প্রমূখ।
আবু জাফর মাহমুদ সিলেটের দক্ষিণ ছাতকের সমাবেশ স্থলকে প্রানপ্রিয় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য একটি জনপদ উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ এখানে আমাকে আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছেন, এটা আমার কোনো পরিকল্পনার অংশ নয়। গত বন্যায় আপনাদের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা যে আত্মীয়তা গড়ে দিয়েছেন, আমি খুব চেয়েছি আমার এই আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। আমি বরাবরই বিশ্বাস করি, ভালোবাসার দায়িত্বের ওপরে কোনো দায়িত্ব নেই। আপনাদের সঙ্গে যে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে এই সম্পর্কটা হচ্ছে ভালোবাসার।
মুুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী সাহেবের কমান্ডে, পরিকল্পনায় ও নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। এই যুদ্ধের আমি একজন সৈনিক। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোনোদিন শেষ হয় না, একজন মুক্তিযোদ্ধারও কোনো অবসর নেই। যতক্ষণ জীবিত ততক্ষণই যুদ্ধ চলবে। এই যুদ্ধ হচ্ছে প্রেমের যুদ্ধ, সম্পর্কের যুদ্ধ। যদি আমার মধ্যে ভালোবাসা থাকে আপনাদের সঙ্গে, আমার প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হবেই।
ড. মাহমুদ ২০২২ সালের বন্যায় ছাতকের জনগোষ্ঠির দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বন্যা শুরু হওয়ার দু’দিন আগে আমি কবীর ভাইয়ের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক যা কিছু সম্বল ছিল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বন্যা শুরুর অনেক আগেই বুঝেছিলাম, হাওরের মানুষের অনেক কষ্ট হবে। আমার কাছে সংবাদ ছিল, এই সিলেটে উপরের অঞ্চল থেকে পানি পাঠানো হবে, দরজাটা খুলে দেয়া হবে। যারা জেনেছিলেন তাদের অনেকেই হয়তো জেনেও চুপ করে ছিলেন। আমি জেনেই আমার সাধ্যমত ব্যবস্থা নিয়েছি, এখানেই পার্থক্য।
স্যার আবু জাফর মাহমুদ ছাতকের প্রিয়মুখ কবীর মিয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, একজন সৎ মানুষ পেয়েছি। যোগ্য মানুষ। উপযুক্ত নেতা। কর্মঠ মানুষ। আমি তার মাধ্যমেই শীতের সময় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি একা ছিলাম কিন্তু পরে তা হয়ে উঠলো একটি পরিবার। আস্তে আস্তে যুক্ত হয়ে গেল কবীর ভাইয়ের আরেক ভাই লিলু মিয়া, জিতু মিয়া, বোন শিউলী বেগমসহ সবাই।
ড. মাহমুদ ছাতক বাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নই। আপনাদের কারো সঙ্গে আমার কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতি যারা ধংস করছে, তারা আমাদের নিঃশ্বাস নেবার শক্তিকে কেড়ে নিচ্ছে। অক্সিজেন পাওয়ার উৎস্যগুলো ধংস করে দিচ্ছে। একজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করলে সে ঘাতক হয়, তাহলে যারা শত শত মানুষকে হত্যা করে পরিবেশ ধংস করে তারা কী? তার এই প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত দর্শকরাই সমস্বরে বলেন ‘গণ হত্যাকারী’। ‘তারা গণহত্যাকারী’।
ড. মাহমুদ বলেন, সেই গণহত্যাকারী মানুষ সংখ্যায় বেশি নয়। মাত্র কয়েকজন। আপনারা এমন পরিবেশ পরিস্থিতি গড়ে তুলুন, যাতে কেউ কোনো গাছ না কটে। হাওরের ভেতর দিয়ে রাস্তা না করে। শহরের ভেতরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধংস না করে। আপনারা এ ব্যপাারে আবু জাফর মাহমুদ ফাউন্ডেশনকে সব সময় পাশে পাবেন।