ফুটবলারের ভূমিকায় তিনি গ্রেট। পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতীতে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। এবার করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন সিআরসেভেন। পর্তুগালের লিসবন ও মাডেইরা শহরে নিজের হোটেলগুলোকে অস্থায়ীরূপে হাসপাতাল করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে। চিকিৎসক, নার্স, ওষুধের যাবতীয় খরচ জোগাবেন স্বয়ং রোনালদো।
জানা গেছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই অস্থায়ী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হবে পারবেন রোগীরা। এই প্রসঙ্গে সিআরসেভেন বলেছেন, ‘খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি গোটা বিশ্ব। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একজন ফুটবলারের ভূমিকায় নয়, মানুষ হিসেবে, বাবা হিসেবে বা সন্তান হিসেবে এই আবেদন করছি। হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) ও সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত। মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। এই ভাইরাস যাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি রইল আমার সমবেদনা। আর আক্রান্ত ও তাদের চিকিৎসকদের জানাই শুভেচ্ছা।’
উল্লেখ্য, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আগে আর কোনো ফুটবলার এমন উদ্যোগ নেননি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খেলা বন্ধ এই ভাইরাসের কারণে। তার আঁচ পড়েছে পর্তুগালেও। তাই আক্রান্তদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন সিআরসেভেন। জুভেন্তাসে তার সতীর্থ ড্যানিয়েল রুগানি আক্রান্ত হয়েছেন নভেল করোনা ভাইরাসে। তাকেও সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রোনালদো। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন খ্যাতনামারা।
কেন সমাজকল্যাণমূলক কাজে বারবার নিজেকে নিয়োজিত করেন রোনালদো? উত্তর জানতে হলে ফিরে যেতে হবে তার অতীতে। ছেলেবেলা থেকেই দস্যি রোনালদোকে সামলাতে বেগ পেতেন তার মা। কিন্তু বাবার নীরব প্রশ্রয়ই তাকে ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করে। তবে লিভারের অসুখে ভুগে মারা যান ডেনিস আভেইরো। সেই মৃত্যু গভীর রেখাপাত করেছিল সিআরসেভেনের জীবনে। তাই মহাতারকা হওয়ার পরে কোনো দিন অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে নিজেকে জড়াননি তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘মৃত্যু কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা চোখের সামনে দেখেছি। বাবা চলে যাওয়ার পর রুক্ষ্ম, কঠিন পৃথিবীকে চিনে নিতে সাহায্য হয়েছে। অন্য কেউ এভাবে পিতৃহারা হোক তা কখনোই চাই না। আমার ক্ষমতা সীমিত। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে যেতে ভালো লাগে। অন্তর থেকে এই দায়িত্ব পালনের সাড়া পাই। জানি না, আমার পক্ষে কতটা করা সম্ভব। তবে চেষ্টা তো চালিয়ে যেতেই হবে। ন্যূনতম ইচ্ছাপূরণ তো দূর অস্ত, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে চিকিৎসা করানোর পর অর্থ নেই। জটিল রোগে ভোগা একাধিক শিশুর চিকিৎসাভার নিয়েছি। চেষ্টা করেছি বাচ্চাদের জন্য স্কুল গড়ে দিতে। কিন্তু এই সমস্ত কাজ নিয়ে প্রচারবিমুখ থাকতেই পছন্দ করি। মানুষ হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য।’
সূত্র : বর্তমান