বরিশালে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সিটি কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীনের ওপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নার বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রইজ আহম্মেদ মান্না জানান, উল্টা তার ওপর হামলা ও তাকে গুলি করার চেষ্টা করেছেন মুরতজা।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মুরতজার অভিযোগ, তার লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন মান্না।
পরে পিস্তলসহ মুরতজা আবেদীনকে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় দু’টি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীনের করা আট মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমি অফিস থেকে মুরতজা আবেদীন বের হওয়ার সময় অফিসের সামনে রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার অনুসারীদের অবস্থান করতে দেখেন। তারপর দু’জনের মধ্যে কিছু কথা হয়। মান্না মুরতজার উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। মান্নার স্ত্রীকে মারধর করা হয়েছে বলে মুরতজার দিকে অভিযোগ তোলা হয়। এর একপর্যায়ে মান্না মুরতজাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলা শুরু করলে বাকবিতণ্ডা হয় এবং মান্না ও তার সহযোগীরা মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা চালায়। পরে মান্না একটি ব্যাটারিচালিত-অটোরিকশার মধ্যে মুরতজা আবেদীনের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে বেশ কিছু সময় ধস্তাধস্তি হয়। পরে মান্নার এক সহযোগী পিস্তলটি নিয়ে যায়।
ফেসবুকে ছড়ানো অপর একটি ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ব্যাটারিচালিত-অটোরিকশার মধ্যে পিস্তল নিয়ে মান্না ও মুরতজার ধস্তাধস্তি হচ্ছে। তখন মান্না বলেন, মুরতজা তাকে গুলি করতে চেয়েছেন। আর মুরতজা পিস্তলটি তার লাইসেন্স করা বলে চিৎকার করে বলছিলেন। এর মধ্যে এক যুবক এসে পিস্তলটি নিয়ে যায়।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা পরিকল্পিত। কেননা মুরতজা নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই মান্না ও তার অনুসারীরা মুরতজার পিছু নিয়েছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ঘটনার সময়ে উপস্থিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শফিক আহমেদ বলেন, ভূমি অফিস থেকে অস্ত্র হাতে মুরতজাসহ দু’জনে দৌড়ে একটি হলুদ অটোরিকশায় মধ্যে ঢুকে পড়েন। ওই সময় কিছু লোকজন অস্ত্রসহ মুরতজাকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়।
জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীন বলেন, ‘আমার ওপর হামলা হতে পারে তা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কেননা বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে ফলো করছিল ওরা। ভূমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর পরই আমার ওপর হামলা চালায় মান্নার লোকজন। ওই সময় আমার কাছে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে মান্না।’
বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্না জানান, ‘আমি পারিবারিক জমি-সংক্রান্ত কাজে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে যাই। কাজ শেষে বেরিয়ে গেটে আসা মাত্র অফিস থেকে বেরিয়ে মুরতজা আবেদীন আমাকে গালি-গালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে হঠাৎ পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়। ওই সময় আমার ডাক চিৎকারে স্থানীরা এগিয়ে এসে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, ‘অস্ত্রটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে, তাছাড়া কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীন থানায় রয়েছেন। আমরা বিষয়টা দেখছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হবে।’
এর আগে, বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মুরতজা আবেদীনের অভিযোগের কারণে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা হারান রইজ আহম্মেদ মান্না। কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে এই দুই রাজনৈতিক নেতার সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষও হয়েছে। নৌকার কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে রইজ আহম্মেদ মান্না গ্রেফতার করা হয়।