সরকার পতনসহ একদফা দাবিতে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে রাজপথে আন্দোলনের গতি বাড়াতে চায় বিএনপি। এর আগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলায় ‘বিচার ও সাজা’ দেওয়ার প্রতিবাদে আইনজীবীদের ব্যানারে আদালত চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। রাজধানীর একাধিক স্পট থেকে এ গণমিছিল বের করবে বিএনপি ছাড়াও ৪২টি রাজনৈতিক দল। এ কর্মসূচি সফল করতে দলগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গত ১২ জুলাই সরকারের পতন চেয়ে একদফা আন্দোলন শুরু হয়। আজকের গণমছিল সেই আন্দোলনের ষষ্ঠ কর্মসূচি। আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের লক্ষ্য গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দলের ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আজ দুটি গণমিছিল হবে; দুটোই দুপুর আড়াইটায় এবং দুটোই একই গন্তব্যে গিয়ে শেষ হবে। উত্তর বিএনপির গণমিছিল রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-মালিবাগ মোড়-শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়-নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছবে। অন্যদিকে দক্ষিণের গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ-ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসবে। এরপর দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
বিএনপি নেতারা জানান, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এ কারণে আগস্ট থেকে প্রতিটি কর্মসূচির বিষয়ে বাড়তি নজর রাখে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আন্দোলনের গতি এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে চান শীর্ষ নেতৃত্ব, মোক্ষম সময় পেলে যেন চলমান আন্দোলনকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। নেতারা বলেন, এ জন্য রাজধানীকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা এবং আশপাশের জেলা ও মহানগরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষদিকে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নেই। এখন আমাদের অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকলেও মামলা-হামলা-গ্রেপ্তার আর গুম-খুনের শিকার হন। কবরে গিয়েও গায়েবি মামলা থেকে রেহাই পান না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তারা যে কোনো আন্দোলনে, যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুতি আছেন।
এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক অন্যান্য জোট ও দলগুলোও আজ শনিবার ঢাকায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করবে। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত, ‘১২ দলীয় জোট’ একই সময় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে শান্তিনগর মোড়, ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে ফকিরাপুল মোড় এবং ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’ সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের সামনে থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গণমিছিল করবে। এ ছাড়া এলডিপি বেলা ৩টায় কারওয়ানবাজারের এফডিসি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে, ‘গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি)’ যৌথভাবে বিকাল ৪টায় মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে গণফোরাম চত্বর থেকে, গণঅধিকার পরিষদ (নুর) বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) একই সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে, লেবার পার্টি সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) বেলা ১১টায় বিজয়নগর বিজয়-৭১ চত্বরে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এনডিএম দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরানা পল্টনস্থ ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করবে।
গত ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ঘোষণার পর বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে তারা।