যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ আরো ছয়টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সম্প্রতি নতুনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে বিমান। ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার’ আবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে (ডিওটি) জমা দেওয়া হয়েছে। বিমানের পক্ষে ডিওটিতে আবেদন করেন বিমানের অ্যাটর্নি (নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী) রবার্ট ডব্লিউ জনসন।
এক সময় নিয়মিত ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। ২০০৬ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-২ এ অবনমন করে দেশটির আকাশপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএএ। এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান সে সময় ব্যবহার করত মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড
ডগলাসের তৈরি ডিসি-১০ মডেলের উড়োজাহাজ।
যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ফ্লাইট পরিচালনার অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ‘লেভেল-১ সেফটি রেটিংয়ে উত্তীর্ণ’ করতে না পারা।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) যখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) রেটিংসহ সব শর্ত পূরণ করবে কেবল তখনই ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। এফএএ এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচকের) মধ্যে চলমান অডিটে উত্তীর্ণ হলে এই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর আশা করছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি বলেছেন, কভিডের কারণে কিছুটা পিছিয়েছে এ প্রক্রিয়া।
তবে আমি এ বছর শেষে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আশাবাদী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম অক্টোবরের মধ্যে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালু করতে। তবে ফ্লাইটের অনুমতির ক্ষেত্রে এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানকে আবেদন করতে হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সময়মতো আবেদন না করায় প্রক্রিয়াটা পিছিয়ে গেছে। আমরা বিমানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি এ বিষয়টি।
১৬৯ পাতার আবেদনপত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বর্তমানে তারা ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক রুটে সরাসরি সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। মাঝে তুরস্কের ইজমির আদনান মেনদেরেস বিমানবন্দরে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে জেট ফুয়েল নেওয়া হবে। তবে এ সময় কোনো যাত্রী ওঠানো বা নামানো হবে না।
বিমান আরো জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বিমান আরো ছয়টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। সেগুলো হচ্ছে- লস এঞ্জেলস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হোস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সি। এসব রুটে বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় বিমান। এটি টানা ৭৯০০ মাইল উড়তে সক্ষম।
এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির ১০টি বিমানবন্দরের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের নয়া দিল্লি ও নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম।
রুটটি চালু হলে বিমানের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বলা হয়েছে, বিমান যদি সপ্তাহে পাঁচটি করে ফ্লাইটের অনুমোদন পায় সে ক্ষেত্রে তারা প্রথম ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে। তবে ২৬০টি রিটার্ন ফ্লাইট পরিচালনার পর তারা ১০০ মিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের মতো আয় করতে পারবে যদি ৭০% সিটে যাত্রী থাকে।
এর আগে ২০০৫-০৬ সালে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক রুটে ৭৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বিমান। ওই সময় প্রতি ফ্লাইটে গড়ে ১৪৫ জন করে মোট ১১ হাজার ৪৫৫ যাত্রীবহন করেছিল তারা। লোকসানের কারণে রুটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে সময় মতো নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করেছে। এ বছরের শুরু থেকে আমরা আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করি। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবেদন জমা দিয়েছি। বিমানের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা-ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও বাংলাদেশের বেবিচকের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন পাওয়া যাবে।