যুক্তরাষ্ট্রে টানা তৃতীয় বছরের মতো নাগরিকদের আয় কমছে। এর ফলে জীবনযাত্রার মান পড়ে যাচ্ছে। টিকে থাকতে অনেককে একাধিক চাকরি পর্যন্ত করতে হচ্ছে। আর শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হলেও মুদ্রাস্ফীতি তাদের ওই বাড়তি আয় গিলে ফেলছে। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর নতুন পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে মুদ্রাস্ফীতি-তাড়িত গড় পারিবারিক আয় কমে হয়েছে ৭৪,৫৮০ ডলার। এটি ২০২১ সালের গড় আয় ৭৬,৩৩০ ডলারের চেয়ে ২.৩ ভাগ কম।
এর প্রভাব প্রকটভাবে পড়েছে নিউইয়র্কবাসীর ওপর। তারা বাইরে বের হচ্ছে কম, সস্তার পণ্য ক্রয় করছে, ভাড়া পরিশোধের জন্য ঋণ করছে, এমনকি বাইডেন প্রশাসনের কথিত ‘বাইডেনোমিক্স’ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কানাডায় পালিয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকান শ্রমিকদের ওপর থেকে আর্থিক বোঝা লাঘব করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘বাইডেনোমিক্স’ ফলপ্রসূ না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গড় পারিবারিক আয় কমে যাচ্ছে।
এই কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে রেসেস হাইড (৩৪) দুটি চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন।
অনেকে তো রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার আগে অস্বস্তি এড়াতে অনলাইনেই মেনু দেখে নিচ্ছেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মুদ্রাস্ফীতির আলোকে হাই স্কুল ডিপ্লোমাধারীদের (যারা কলেজ ডিগ্রি নেননি) আয় ৫.৩ ভাগ কমে গেছে। আর বাড়তি ডিগ্রিধারীদের আয় কমেছে ৪.৯ ভাগ।
ব্রুকলিনের সেলেন স্টিভেন্স (৬২) জানিয়েছেন, তিন বছ ধরে তার আয় বাড়েনি। তিনি এখন ভাড়া মেটাতে তাদের স্বজনদের সহায়তা কামনা করছেন। তিনি একটি ফুড ব্যাংক থেকে মুদি সামগ্রী নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
তিনি এই আর্থিক সমস্যার জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, অর্থনীতির দিকে বাইডেন তেমন নজর দিচ্ছেন না।
নিউইয়র্কের আরেক বাসিন্দা ৩২ বছর বয়স্কা ইদ্রাজা মনে করছেন, তার বেস পে ২০ হাজার ডলার বেড়ে এক লাখ ৩১ হাজার ডলার হলেও তিনি এখন ‘আগের চেয়ে গরিব’ মনে করেন। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি তার বাড়তি আয় গিলে ফেলছে।
তিনি বলেন, ছয় অঙ্কের আয়ও এখন খুবই কম মনে হচ্ছে। ট্যাক্স আর ভাড়া দেওয়ার পর বলতে গেলে কিছুই থাকে না।
আর পেত্রা হ্যানসন, ৫৫, জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে তিনি তার সঞ্চয় খেয়ে টিকে আছেন।
অর্থনীতিবিদেরা যতটুকু অনুমান করেছিলেন, মুদ্রাস্ফীতি তার চেয়ে বেশি হয়ে পড়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে এবারের আগস্টে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৩.৭ ভাগ।
টানা তিন বছর ধরে খাবারের দাম ০.২ ভাগ বেড়েছে। আগস্টে গোশত, পোল্ট্রি, মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে ০.৮ ভাগ।
এর ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি ক্ষুব্ধ হচ্ছে নাগরিকেরা।
হাইড তো বলেই ফেললেন, ‘প্রেসিডেন্ট ঘুমিয়ে আছেন। তিনি শক্তিশালী নেতা নন।’