প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা যে সমস্ত অপকর্ম করেছেন, সেই তুলনায় তাদের কিছুই করা হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়ার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রেখে ভয়েস অফ আমেরিকার ওই সাংবাদিক বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ সেল থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, ২০০৯ থেকে গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত গত ১৪ বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সকল মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জন।’
প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) বিরুদ্ধে মামলা কেন হয়েছিল। দুর্নীতি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা অগ্নিসন্ত্রাস। সবচেয়ে বেশি মামলা অগ্নিসন্ত্রাসের। মামলা চলমান প্রক্রিয়া। মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তারা যে মামলার হিসাব দিল, সেই হিসাবের কোনো তালিকা কি তারা দিতে পেরেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে তারা (বিএনপি) হত্যা করেছে। এখনো কত মানুষ পঙ্গু হয়ে আছে, কত মানুষ স্বজনহারা হয়ে আছে। সেই জিয়াউর রহমান থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত কত লাশ গুম হয়ে গেছে। আমিও তো পারিনি আমার বাবা-মায়ের লাশ দেখতে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা, সেগুলো এখনো চলছে। মামলা তো কখনো থামে না। তারা যে সমস্ত অপকর্ম করেছে, সেই তুলনায় তো তাদের কিছুই করা হয়নি।’
বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধেই তো এক ডজন মামলা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। আমরা তো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দিইনি। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা তারই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান ও তারই নির্বাচিত তত্ত্বাবধায় সরকাররেই দেওয়া। সেগুলো একেক করে রায় হয়েছে। সেই রায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের একটা নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দিত না। ঘরে গিয়ে গিয়ে তারা মেরে আসত। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর তারা যে কত মানুষ মেরেছে, তার একটারও বিচার হয়নি। অপারেশন ক্লিনহার্টে যারা মানুষ মেরেছে, তাদের ইন্ধন দিয়েছে বিএনপি সরকার। ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা, ভাই-বোনকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে পুরস্কৃত করাসহ রাষ্ট্রমর্যাদা দিয়েছে জিয়াউর রহমান, তারপর খালেদা জিয়া। এমন কী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা জনগণের ভোট চুরি করে ওই খুনিদের পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। খুনিদের মদদ দেওয়া ও খুনিদের নিয়ে চলা তাদেরই কাজ।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অহেতুক কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা হবে, সাজা হবে—এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এখনে বিএনপি বলে কিছু নেই, অপরাধী অপরাধীই। অপরাধী হিসেবেই তাদের দেখতে হবে।’