ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এ বিষয়ে আজ আইনি মতামত জানাবে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে ‘মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি’ চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি।
হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অধীন তার চিকিৎসা চলছে। এ মেডিক্যাল বোর্ডে ১৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। খালেদা জিয়াকে গত কয়েক দিনের মধ্যে তিন দফায় কেবিন থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে লিভার, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার অবস্থা ‘সংকটজনক’ বলে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
মেডিক্যাল বোর্ড গত দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারও খালেদা জিয়ার দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে সুপারিশ করেছে। সে জন্য তাকে বিদেশে ‘মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি’ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। তা না হলে তার জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বোর্ড। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই
শামীম এস্কান্দার বোনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান, মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার ভাইয়ের করা একটি আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আমরা বিষয়টি দেখছি। আবেদনের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো মতামত দিইনি। আমরা আগামীকাল (আজ রবিবার) মতামত দিয়ে ফাইল ছেড়ে দেব।’
অন্যদিকে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছিলেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হলে নতুন করে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। আইনমন্ত্রীর এ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতেই আবেদন করেছে খালেদা জিয়ার পরিবার। আবেদনটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি বলেন, ‘জীবন রক্ষার জন্য এখনো সরকারের কাছে মানবিকতা প্রত্যাশা করছে খালেদা জিয়ার পরিবার। সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছে। সরকার নির্বাহী আদেশেই তাকে বিদেশে পাঠাতে পারে।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের হাতে, এমনটাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আদালত যদি অনুমতি দেয়, তবে খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে পারবেন। সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তাকে যদি বাইরে যেতে হয়, তাতে এখন যে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি, তা প্রত্যাহার করত হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে, কোর্ট যদি রায় দেন, তবে সে যেতে পারবে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাস বাড়ানো হয়।