প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস ১৯৫টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯২ জন এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩১৩। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে প্রাণহানির দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবারও ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে মারা গেছে ৬০১ জন। ইউরোপে এর পরই সবচেয়ে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে পার্শ্ববর্তী স্পেনে, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ৪৩৫ জনের।
এমন পরিস্থিতিতে ইতালি ও স্পেনের যেসব খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসছে, তা দেখে আঁতকে উঠছেন সবাই। ইতালির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সির বরাত দিয়ে দ্য মেট্রো জানিয়েছে, সেখানে প্রতি দুই মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন। আর মৃত্যুর এ হারই দেশটিতে মাত্র দুই সপ্তাহে মৃতের মোট সংখ্যা নিয়ে গিয়েছে ৬ হাজার ৭৭ জনে। প্রতি দুই মিনিটে একজনের বেশি লোক প্রাণ হারাচ্ছে ভাইরাসটিতে। মোট আক্রান্ত ৬৩ হাজার ৯২৭ জন। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সর্বোচ্চ প্রকোপে বিপর্যস্ত উত্তর ইতালিতে সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির সরকার।
ইতালিতে সংক্রমণের মাত্রা যে কত ভয়াবহ, তা ফুটে উঠেছে মেইল অনলাইনের আরেকটি ছবিতে। তাতে দেখা যায়, সম্প্রতি রাজধানী রোমের রাস্তায় পড়ে আছেন মাস্ক পরিহিত এক ব্যক্তি। তিনি মৃত নাকি বেঁচে আছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। এমনকি ভয়ে তাকে কেউ সাহায্য করতেও এগিয়ে আসেননি। অবশেষে মেডিক্যাল বিভাগের
কর্মীরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। মিররের খবরে বলা হয়, মিলানের বেরগামো শহরের কেন্দ্রীয় হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা দেখলেও যে কেউ আঁতকে উঠবেন। সেখানে রোগীর এত ভিড় যে, হাসপাতালের মেঝেতেও তাদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেনাসদস্যদের দেখা গেছে ট্রাক ভর্তি করে মৃতদের কফিন শহরের বাইরে নিয়ে যেতে।
স্পেনেও চলছে একই অবস্থা। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৮৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৭ জনে। নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে জানা যায়, রাজধানী মাদ্রিদের হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীতে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, মাদ্রিদের সিভেরো ওকহোয়া লিগানেজ হাসপাতালে এতটাই চাপ যে, বেড না পেয়ে রোগীরা গাদাগাদি করে পড়ে আছেন হাসপাতালের মেঝেতে। আশঙ্কাজনক কোনো কোনো রোগীকে চিকিৎসা নিতে তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শহরের আরেক বড় হাসপাতাল ইনফানতা লিওনরেও তিলধারণের জায়গা নেই। সেখানেও অনেক রোগীকে দেখা গেছে মেঝেতে পড়ে থাকতে।
এমন পরিস্থিতিতে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ দেশজুড়ে চলমান জরুরি অবস্থা আরও ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য পার্লামেন্টকে প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের কোনো এলাকায় মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। কেউ আদেশ অমান্য করলে পুলিশ কঠোর হবে।
এদিকে ইউরোপের আরেক দেশ যুক্তরাজ্যেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশবাসীকে হুশিয়ার করেছেন, ইতালি-স্পেনের পরিস্থিতি থেকে তার দেশ মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ পিছিয়ে আছে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০, মারা গেছে ৩৩৫ জন। এর মধ্যে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রাণ গেছে অন্তত ৫৪ জনের।
ইতালিকে সাহায্যে উপদ্রুত এলাকায় যাচ্ছে রুশ সেনারা
করোনার প্রকোপে বিপর্যস্ত ইতালির সাহায্যে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া। রয়টার্স জানায়, ফোন করে ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তার সেনারা উপদ্রুত এলাকায় সাহায্য করতে প্রস্তুত। সেনাবাহিনীর ১০০ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও মেডিক্যাল স্টাফসহ নয়টি বিমানের প্রথম স্কোয়াড্রন অচিরেই রোমে পৌঁছাবে।