বাস, ট্রেন, লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শুধু মানুষ আর মানুষ। হন্যে হয়ে ছুটছেন সবাই। তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। গতকাল এটাই ছিল রাজধানীর রাস্তাঘাটের চিত্র। বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণায় মানুষের মধ্যে ছোটাছুটি আরো বেড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, স্টেশনগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল ঈদের ছুটির মতো।
গতকাল দুপুরের দিকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় কথা হয় সেলিম নামে এক ব্যক্তির সাথে। বরিশালে যাবেন তিনি। জানালেন, যাওয়ার কথা ছিল বিকেলে লঞ্চে। কিন্তু দুপুরের দিকে জানতে পারেন বিকেলে লঞ্চ বন্ধ থাকবে। তাই মাওয়া হয়ে সড়ক পথে বরিশালে রওনা হয়েছেন।
সেলিম জানালেন, দিনে দিনে বরিশালে পৌঁছতে হবে। না হলে সমস্যায় পড়তে হবে। একটু ঝুঁকি নিয়েই তাকে বের হতে হয়েছে। না হলে কবে আর বাড়ি যেতে পারবেন তার ঠিক নেই। সেলিম জানালেন, স্ত্রী-সন্তানদের দুই দিন আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সুজন নামের এক শিক্ষার্থী জানালেন, তার বাড়ি ফরিদপুরে। ঢাকা কলেজের ছাত্র। ঢাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করেন। যেসব বাসায় ছাত্র পড়ান তারা এখন আর বাসায় যাওয়াটা পছন্দ করছেন না। যে কারণে ঢাকা ছাড়ছেন। আর এক্ষুণি না গেলে হয়তো ঢাকায়ই থেকে যেতে হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় মহাখালী থেকে প্রত্যক্ষদর্শী গিয়াস উদ্দিন জানান, মানুষের মধ্যে গাড়িতে চড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। কে কার আগে গাড়িতে চড়তে পারে সেই প্রতিযোগিতায় সবাই। মনে হচ্ছে একটি গাড়ি মিস করলে হয়তো আর কোনো গাড়ি নাও পেতে পারেন। কমলাপুরের স্টার লাইন পরিবহনের শ্রমিক ফারুক জানালেন, এত যাত্রীর ভিড় আগে কোনো দিন দেখেননি।
লঞ্চ যাত্রীদের অনেকেই তখনো রাস্তায়। তারা বিকেলের লঞ্চে চড়বেন। সদরঘাটে গিয়ে হঠাৎ তারা জানতে পারেন লঞ্চ ছাড়ছে না। দিশেহারা মানুষগুলো তখন আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গিয়াস নামের এক যাত্রী জানালেন, এভাবে কেন হঠাৎ বন্ধ করা হলো? দু-এক দিনের সময় দিয়ে বন্ধ করতে পারত। হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘোষণা আসার আগে যেসব লঞ্চ ছেড়ে গেছে তাতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন জানান, দুপুরের দিকে হঠাৎ লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসে। এতে মানুষ বিপদে পড়ে যায়। তিনি বলেন, মালিকদের কিছু করার নেই। সরকার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাই মালিক পক্ষ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। একই সময়ে বিপণিবিতান ও গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। এ দিকে অফিস আদালত ছুটি ঘোষণা করায় অনেকেই আগেই বাড়ি চলে গেছেন। পরিস্থিতি আরো নাজুক হতে পারে সে কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে ট্রেন, লঞ্চ ও বাস বন্ধের ঘোষণা আসায় মানুষ আরো দিশেহারা হয়ে পড়েন। যারা বাস, লঞ্চে চড়তে পেরেছেন তারা গাদাগাদি করে ঢাকা ছেড়েছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন এভাবে জমায়েত ঝুঁকিপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ সময় সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করা খুবই জরুরি। এখন সব ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।