বিএনপি পূর্বপরিকল্পিতভাবে শনি ও রোববার হামলা চালিয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলে তারা (বিএনপি) তাদের রাজনীতির সন্ত্রাসী ধারা বাস্তবায়নে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরা ভয়ংকর রাজনীতির ধারা, পুরোনো চেহারায় ফিরে আসার জন্য সময় নিচ্ছিল এবং সময় মতোই তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছে। রোববার বিকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ঐতিহ্যগতভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন। কানাডার আদালত ৬ বার রাজনৈতিক দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছে। এরা ২০১৩-১৪ সালে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। একইভাবে আজকে তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে বেছে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে। তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী নয় বলে রাজনৈতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কারও সঙ্গে সংঘাতে যাব না। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, গায়ে পড়ে কেন সংঘাতে যাব? আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তবে আমাদের ওপর হামলে পড়লে পরিস্থিতি যা বলবে তাই করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের হাতে নিরাপদ নয়। তাই আমরা এখনো বলব, এ সহিংসতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরে আসুন। ক্ষমতা পরিবর্তনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শনি ও রোববারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংলাপের পথ বিএনপি রুদ্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন আর সেই সুযোগ নেই। আমরা আগবাড়িয়ে সংলাপ নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করছি না। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি সংসদ নির্বাচনে আসুক।
জামায়াত তাদের শনিবারের সমাবেশের পর সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে। তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ দলটির কোনো আঁতাত হয়েছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশের বাঘা বাঘা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করল যে সরকার, সেই সরকারের সততা নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুললেন?
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিএনপি চ্যালেঞ্জ করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মানে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে তারা অপমান করেছে। গত দুই দিন তারা কী করেনি? আসলে বিএনপি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অত্যন্ত ক্ষোভ ও বেদনার সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারো নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলো।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী নয়। সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশকে তারা বিনষ্ট করছে। শনিবার নৃশংস হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে আগুন এগুলোই ছিল তারেক রহমানের টেকব্যাক। গত দুই দিন তারা কী করেনি!
নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির কাউকে রাখা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ইলেকশন টাইমে যদি বাইরের কাউকে যুক্ত করাও হয়, তাহলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের করব। তাদের তো কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। তারা পদত্যাগ করেছেন।
আন্দোলন প্রতিহত করার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বলেছিলাম, আমরা থাকব। আমি তো আছি। বিএনপি কোথায়? আন্দোলনে? তারা তাদের দোসর জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যা করেছিল, এখন সেই অন্ধকারের পথে তারা পুনরায় যাত্রা শুরু করেছে। তারা গতকাল (শনিবার) দেশ-বিদেশে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। তাদের ভয়ংকর চেহারা উন্মোচন হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর এবং অর্ধশত যানবাহনে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যা করেছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকজন নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ডেমরায় পরিবহণ শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের ছয়জনসহ আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সবার প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। হামলাকারী ও নির্দেশদাতাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ৪ নভেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, ফারুক খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা মৃণাল কান্তি দাস, আব্দুস সবুর, বিপ্লব বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেন, নজিবুল্লাহ হিরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।