বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেষ হওয়া অবৈধ সংসদই আওয়ামী লীগের শেষ সংসদ। তাদের আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই। জনগণ চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের জীবন বাজি রাখা উদ্বেল আন্দোলনে বিজয় এখন নিশ্চিত।’
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল সমাপ্তি ঘটেছে নিশিরাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের। গত পাঁচ বছর ধরে ভুয়া এমপিরা সংসদে দাঁড়িয়ে কেবল স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার, খিস্তি-খেউড়, কুৎসা উদ্গীরণ আর আওয়ামী কোটারি স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন। সংসদকে জনসম্পৃক্ততাহীন কথিত জনপ্রতিনিধি দাবিদাররা বিএনপিসহ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা, হুমকি-ধামকির বক্তব্য চর্চার ময়দান বানিয়ে ফেলেছিল। তারা সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণকর কিছু করেনি।’
তিনি বলেন, ‘মোট ২৭২ দিনের কার্যদিবসে এই সংসদকে আওয়ামী দলীয় আড্ডাবাজির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সংসদে যে ১৬৫টি বিল পাস করেছে তার প্রায় সবই গণবিরোধী।’
তিনি বলেন, ‘গত মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় হয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদে শুধু প্রশংসায় ব্যয় হয়েছে ৬১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৪ টাকা। কোরাম সংকটে সংসদের ক্ষতি প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৭৭৯ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকারি দল একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেছে। তার মানে সংসদকে আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকার খায়েশ পূরণে আপন স্বার্থে যা ইচ্ছা তাই করেছে। তবে শেষ হওয়া এ অবৈধ সংসদই আওয়ামী লীগের শেষ সংসদ। তাদের আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই। জনগণ চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের জীবন বাজি রাখা উদ্বেল আন্দোলনে বিজয় এখন নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট ডাকাতি করে আর কোনোদিন সংসদে যাওয়ার সুযোগ দিবে না। আর এই ভুয়া সংসদকে রাবার স্টাম্প বানিয়ে যেসব অবৈধ আইন পাস করা হয়েছে তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপিরা বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘জনগণের রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন, দেশের ৯৫ শতাংশ জনমত এবং জাতিসঙ্ঘসহ গোটা বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ আবারো আরেকটি একতরফা পাতানো নির্বাচন আয়োজনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামী নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী দলদাস পুলিশ ও আওয়ামী দলদাস প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিরোধী দল-মত উচ্ছেদ করে পুরনো কায়দায় নতুন কোনো ফর্মুলায়
ভোটরঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য।’
‘দেশে জনগণের ভোটের অধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনকালে বা পালনের পরে পুলিশ নানা অভিযোগ-অজুহাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও নানা নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু করে দেয়। বিরোধী দলগুলোর এসব কর্মসূচি পালনকালে সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠনের সাঙ্গপাঙ্গদেরও রাজপথে মারমুখী অবস্থানে দেখা যায় এবং তারা মারণাস্ত্রসহ নানা সহিংস সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে, যার ভিডিও চিত্র এবং স্থির চিত্র হরহামেশা গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব গুন্ডাপান্ডাদের বা নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে গ্রেফতার হতে দেখলাম না। তাহলে রাষ্ট্রের এই পুলিশ বাহিনী কার? আওমামী লীগের? পুলিশের এহেন দলীয় দাসসুলভ কর্মের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশ থেকে খবর পাচ্ছি, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে তথাকথিত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে নতুন এক অভিনব কদর্য মিশনে নেমেছে আওয়ামী লীগ। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগী প্রায় দুই কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ এবং দলীয় অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত কয়েক দিন যাবত প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়, প্রতিটি উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং উপকারভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং নেতারা। প্রায় প্রতিটি সমাবেশে জেলা প্রশাসক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউএনওসহ থানার ওসিরাও উপস্থিত থাকছেন। প্রতিটি গ্রাম থেকে কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের সমাবেশে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। না গেলে কার্ড বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভয়-ভীতি প্রদর্শক করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই সমাবেশে সরকারের কথিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অবহিতকরণ এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকায় ভোট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’
‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় সকল মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তা, ভিজিএফ, টিসিবি, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল ধরনের সুবিধাভোগীদের কার্ড ভোটের আগে জমা দেয়া এবং ভোটকেন্দ্রে এসে তা ফেরত নেয়া যাবে বলে অধিকাংশ সমাবেশে জানানো হচ্ছে।’
‘ভোটকেন্দ্রে সন্তোষজনক মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি এবং ভোট প্রদানের শতকরা হার বড় আকারে বিদেশীদের দেখানোর জন্য এই ভয়াবহ কূটকৌশল নিয়েছে এ সরকার। জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় ভাতাভোগী অসহায়-হতদারিদ্র মানুষদেরকে এ সরকার গণতন্ত্র ও অবাধ-সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টিকারী বিদেশীদের সামনে প্রতারণার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কারণ সরাসরি কার্ডধারী ১ কোটি ২০ লাখ ভাতাভোগীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি মানুষ। বাংলাদেশের প্রায় ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ছয় ভাগের এক ভাগ উপকারভোগী।’
রিজভী বলেন, ‘কোনোকিছুতে উপকার হবে না। সময় শেষ। এ সরকারের পতন হবেই। সুতরাং আমরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ সকলকে বলবো, জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণশত্রু হবেন না।’
এ সময় সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন রিজভী।