দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি একজন ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে এক সভায় নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এর চর্চা বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে মানুষের মুখে মুখে এখন আওয়ামী লীগের ‘ডামি প্রার্থী’।
যদিও এ দেশের মানুষ ‘ডামি প্রার্থী’ শব্দটির সাথে আগে তেমন পরিচিত ছিল না। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসেও এটি একেবারেই নতুন। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শব্দটির ব্যবহার আছে। এর আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার ধারণাটি ব্যবহার হয়েছিল।
উইকিপিডিয়া বলছে, ‘একজন ডামি প্রার্থী হলেন- একজন প্রার্থী যিনি সাধারণত কোনো উদ্দেশ্য বা জয়ের বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা ছাড়াই নির্বাচনে দাঁড়ান। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য এবং সেই প্রার্থীর ভোট ভাগ কমানোর জন্য আরো প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীর মতো নামসহ ডামি প্রার্থীদের মাঠে নামাতে পারে। ডামি প্রার্থীর নামও প্রতারণামূলকভাবে একজন অবসরপ্রাপ্ত পদপ্রার্থী, একজন প্রাক্তন প্রার্থী বা পদাধিকারী, এমনকি একজন মৃত প্রাক্তন প্রার্থী বা পদাধিকারীর মতোও হতে পারে। (এডি মারফি ফিল্ম দ্য ডিস্টিংগুইশড জেন্টলম্যান কিছুটা এই ভিত্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।) উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে মহাসমুন্দে চান্দু লাল সাহু নামে সাতজন এবং চান্দু রাম সাহু নামে আরো চারজন প্রার্থী ছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টির চান্দু লাল সাহু ৫০৩,৫১৪ ভোট পান, কিন্তু তার জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ১,২১৭ ভোট। ডামি প্রার্থীরা তার জন্য নির্ধারিত ভোট পান।’
এদিকে বিএনপি ও তার মিত্ররা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এমন আশঙ্কা থেকেই আন্তর্জাতিক মহলকে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে তার দলের ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার পথটি বেছে নেয়।
গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন হাজার ৩৬২ জনের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা তার দলের প্রার্থীদের বিনা ভোটে নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কেউ বিনা ভোটে (প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন বলে দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা মত দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন জানান, ডামি প্রার্থীদের বিষয়ে দলের কোনো আপত্তি নেই।
অবশ্য বিএনপিবিহীন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওইসব ডামি প্রার্থীরাই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দল মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থীদের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীর কাছে ধরাশয়ী হতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন জোরালো আলোচনা রয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরাও আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন।