বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার শুরু হচ্ছে ইজতেমা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৩৩ বার

নানা মহলের জোর প্রচেষ্টার পরও আজো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি দ্বীন প্রচারে ঐতিহ্যবাহী অরাজনৈতিক সংগঠন তাবলিগ জামাত। ফলে চতুর্থবারের মতো এবারো দুই গ্রুপ আলাদা ইজতেমার আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর থেকে শুরু হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশের তাবলিগ মুরব্বি মাওলানা জোবায়েরপন্থীদের বিশ্ব ইজতেমা। আগামী রোববার আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে তাদের ইজতেমা সমাপ্ত হবে। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ভারতের মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর প্রপ্রৌত্র মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা। তবে সা’দ অনুসারীরা এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে তাদের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা এবং হেফাজতে ইসলামের এটি চতুর্থ বিশ্ব ইজতেমা বলে দাবি করছেন।

এ দিকে দ্বীন (ধর্ম) প্রচারের বৃহত্তর এ সংগঠনের চলমান বিরোধ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে দেশের প্রশাসন। ইতঃপূর্বে বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় একটি মসজিদের ভেতর সা’দপন্থী একটি জামাতের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা। মাওলানা সা’দপন্থীরা নিজেদের তাবলিগের মূল ধারার অনুসারী এবং মাওলানা জোবায়েরপন্থীদের বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম নিয়ন্ত্রিত বলে দাবি করে থাকেন। অপর দিকে মাওলানা জোবায়ের পন্থীরা মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর ‘কিছু বিতর্কিত বক্তব্য’ এবং তাবলিগে তার একক নেতৃত্ব বা আমিরত্বকে অস্বীকার করে তাকে (সা’দ) তাবলিগের উসুল বা মূল ধারা থেকে খারিজ বলে দাবি করে থাকেন। জোবায়েরপন্থীরা শূরায়ে নেজামের (মাসোয়ারা বোর্ড) ভিত্তিতে তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিশ্বাসী। ফলে তারা আ’লমে শূরা (বিশ্ব পরামর্শসভা) দ্বারা পরিচালিত বলে দাবি করেন। জোবায়েরপন্থীদের এমন দাবিকে স্ববিরোধী উল্লেখ করে সা’দ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে যুক্ত হাজী মনির বলেন, তারাও (জোবায়েরপন্থীরা) যখন তাবলিগের কাজে জামাত নিয়ে বের হন, তখনো তো একজনকে আমির নিযুক্ত করেন। অথচ তারা আমির মানেন না এমন কথা বলা ভণ্ডামি ও ইসলামবিরোধী। কারণ পবিত্র কুরআনেই আমিরের প্রতি আনুগত্যের কথা বলা আছে। নবী রাসূল ও খোলাফায়ে রাশিদীনের আমলেও আমির ছিলেন এবং সবাই আমিরের আনুগত্য করতেন।

এ দিকে তাবলিগ জামাতের এই দ্বিধাবিভক্তির কারণে সাধারণ অনুসারীরাও কারা হকপন্থী তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। তবে সাধারণ অনুসারীদের প্রত্যাশা, দুই গ্রুপ আবারো এক হয়ে আগের মতো একসাথে ইজতেমার আয়োজন করে তাবলিগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করবে। সাধারণ অনুসারীরা দ্বিধাবিভক্তিতে বিশ্বাস না করায় তারা উভয় গ্রুপের ইজতেমায় শরিক হয়ে থাকেন। অপর দিকে সরকারসহ সব মহলই তাবলিগ জামাতকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চায়।

‘তাবলিগের ঐক্য অক্ষুণœ থাক এটাই আমরা চাই’ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গত ২২ জানুয়ারি টঙ্গীতে ইজতেমার প্রস্তুতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ফলো-আপ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, ‘বিশ^ ইজতেমা আমাদের কাছে একটা গর্বের বিষয় ছিল। সারা পৃথিবীতেই আমাদের এই ইজতেমাটা সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল, সারা বিশ^ থেকে লোক আসত। এই ইজতেমা বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্য। বাংলাদেশে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এই ইজতেমার মাধ্যমে। এই জিনিসটা অক্ষুণœ থাক এটাই আমরা চাই।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের বিরোধ মিটানোর জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক পানি গড়িয়েছে। আমরা বহু জায়গায় আপনাদের (তাবলিগ মুরব্বিদেরকে) পাঠিয়েছি। কিন্তু আপনাদের মনোভাবটা পরিবর্তন হয় নাই। সেজন্য আমরা কষ্ট পেয়েছি।’ উত্তরায় মসজিদের ভেতর অপ্রীতিকর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, মসজিদে আল্লাহর ঘরে গিয়েও আপনারা দখল বেদখল করেন, আমাদের লজ্জায় মাথা হেড হয়ে যায়। আপনাদের কাছে রিকোয়েস্ট থাকবে আপনারা এই কর্মটা থেকে বিরত থাকবেন। সবাই মিলেমিশে থাকবেন। আমাদের সেই শিক্ষাটাই দিবেন, আল্লাহর দাওয়াতের কথাটা আমাদের যেভাবে শিক্ষাটা দিচ্ছেন। আমাদের মিলেমিশে থাকার শিক্ষাটাও আপনারা দিবেন। তিনি বলেন, উত্তরায় যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন জায়গাও এই ঘটনাগুলো ঘটে। আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করব আপনারা এই ঘটনাগুলো ঘটাবেন না। মিলেমিশ চলতে পারার জন্যই আপনাদের আবার রিকোয়েস্ট করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আপনারা যদি আবার এক প্লেটে একসাথে ওয়াসিফ-জুবায়ের সাব খেতে পারতেন। আমরা যদি এটি দেখে যেতে পারতাম তাহলে আমরা খুব খুশি হতাম।’ সভায় এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনি নেতৃত্ব দেন এই দুই গ্রুপ জুবায়ের সাব ও ওয়াসিফ সাবকে মিলিয়ে দিতে পারেন কিনা। এক টেবিলে এক প্লেটে খাওয়ায়ে দিতে পারেন কিনা। তাহলে আমরা আপনাদের অনেক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাব।’

মন্ত্রী এ সময় বলেন, আমি জুবায়ের গ্রুপকে একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনারা কিন্তু প্রথম আসছেন। প্রতিবারই আপনাদের দাবি অনুযায়ী প্রথমবার মাঠটা আপনাদের দেয়া হয়। সেই দাবি রক্ষা করে আপনাদের যেভাবে সম্মান দেয়া হয়েছে ঠিক সেই সম্মানের সাথে তাদের (সা’দপন্থীকে) মাঠটা বুঝিয়ে দিবেন। যাতে কোনো রকম ভাঙচুর না হয়, তারা যেন কোনো ক্লেইম না করেন। এটা আপনাদের কাছে আমার রিকোয়েস্ট থাকবে। তিনি বলেন, আমরা গতবারও শুনেছি কিছু ভাঙচুরও হয়েছে, কিছু জিনিস খোয়া গিয়েছে। আরো নানান ধরনের কথাবার্তা শুনছি। আমরা চাই আপনারা সুন্দরভাবে তাদের মাঠটা বুঝিয়ে দিবেন।’

‘তাবলিগের দুই গ্রুপের কর্মকাণ্ডে আমি লজ্জিত’ : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
একই সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ‘আপনাদের কর্মকাণ্ডে আমি নিজেই খুব লজ্জা পাচ্ছি। আমরা মানুষকে বুঝাই, শিখাই যাতে এরকম না হয়। আমাদের যদি আরেকজন ভুল ধরেন এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব লজ্জিত। আমি তাবলিগের সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে প্রত্যাশা করি, আমাদের আচার-আচরণে এরকম ভুল আর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ দশটা মতভেদ হতেই পারে, দশজন উগ্র হতে পারে তাতে অসুবিধা কী? আমাদেরও তো হয়। তাই বলে একজন যাওয়ার সময় একটা কিছু ভেঙে যাবে বা এমন কিছু আচরণ করে যাবে যা আরেকজনের কাছে কষ্টদায়ক হয়।’

‘আমরা চাই না তাবলিগের এই বিভেদটা আগামী দিনের জন্য থাকুক’ : ধর্মপ্রতিমন্ত্রী
একই সভায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বলেন, ‘তাবলিগ জামাতকে সারা বাংলাদেশের মানুষ বিশ^াস করে, সহযোগিতা করে। আজকে দু’টি গ্রুপ হওয়ার কারণে অনেক অসঙ্গতিপূর্ণ কাজকর্ম হচ্ছে, যা সত্যিকারে আমাদের খুব কষ্ট লাগে, বিবেকে বাধা দেয়। আমরা আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য দ্বীনের কাজ করি। অথচ সেখানে আমাদের মধ্যে বিভেদ অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, আমরা চাই না এই বিভেদটা আগামী দিনের জন্য থাকুক। আপনাদের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ^াস। আমরা চাই আপনাদের ঐকমত্য পোষণকল্পে আগামীতে এই বিশ^ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামীতে কোথাও কোনো রকম ত্রুটিবিচ্যুতি এক তিল পরিমাণও যাতে পরিলক্ষিত না হয় উভয় পক্ষের কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ থাকবে।’

‘আপনাদের নিয়ে আমরা অস্বস্তিতে থাকি’ : পুলিশ প্রধান : একই সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তাবলিগ জামাতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘একটা সময় ছিল আপনারা বলতেন আপনাদের সাহায্যের দরকার নাই। আপনারাই সব ব্যবস্থা করতেন। আমরা তখন খুব স্বস্তিতে থাকতাম এবং তবলিগ জামাতকে সাহায্য করা আমরা একটা ইবাদত মনে করেছি। এখন যে অবস্থা হয়েছে তাতে আপনাদের নিয়ে আমরা অস্বস্তিতে থাকি। আপনারা দুইজন একসাথে বসেন না এমন একটা অবস্থা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই জিনিসগুলো যাতে আর না হয়, আমরা একটা চমৎকার পরিবেশ দেখতে চাই। যৌথভাবে আপনারা আবারো তবলিগ জামাতের আয়োজন করবেন। একটি সুন্দর পরিবেশ হবে এমন আগামীর আশায় রইলাম।

আইজিপি আরো বলেন, ইতঃপূর্বে যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ রেখে সবাই বাস্তবায়ন করব। গতবারও শুনেছি এক পক্ষ যখন আরেক পক্ষকে মাঠ বুঝিয়ে দেয় তখন ভেঙে দেয়। আমরা আদব-লেহাজ-তমিজ আপনাদের কাছ থেকে শিখব। তাবলিগে যারা আছেন আপনাদের কাছ থেকে আমরা শিখেছি। এখন আপনাদের মাঝে এসব কী হচ্ছে?’ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী শিখবে? এটা আপনাদের কাছে একটা নিবেদন থাকবে। আমরা আপনাদের কাছ থেকে যে জিসিনগুলো শিখি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের শিশুদের আমরা তা শিখাই। এখন আমরা কী শিখব আপনারা আজ আমাদেরকে বলে যাবেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com