সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন

পণ্যের উচ্চমূল্যে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে ৭০ শতাংশ পরিবার

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪
  • ৪৮ বার
তিন দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও কভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের জন্য দেশের উন্নয়ন বেশ বাধার মুখে পড়েছে। বেড়েছে দারিদ্র্য ও বৈষম্য। এমনকি মূল্যস্ফীতির জেরে মানুষ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (জিডিআই) যৌথভাবে কভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৮ সালে সানেম-জিডিআই বাংলাদেশের ৫০০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিটে (পিএসইউ) ১০ হাজার ৫০০টি খানায় একটি জরিপ চালায়। বর্তমান গবেষণায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে এই একই খানাগুলোতে জরিপ করা হয়েছে।

‘কভিড-১৯ প্যান্ডেমিক, পোস্ট প্যান্ডেমিক চ্যালেঞ্জেস, অ্যান্ড পোভার্টি ডাইনামিকস ইন বাংলাদেশ : এভিডেন্স ফ্রম আ লংগিটিউডিনাল হাউসহোল্ড সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা গেছে যে ৭০ শতাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে, ৩৫ শতাংশ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হ্রাস করেছে, ২৮ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ১৭ শতাংশ সঞ্চয় হ্রাস করেছে। খাদ্যাভ্যাসের এমন হ্রাসমান তারতম্য পরিবারগুলোকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এই গবেষণা এফএও নির্দেশিকা অনুসরণ করে ফুড ইনসিকিউরিটি এক্সপেরিয়েন্স স্কেল দ্বারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিমাপ করে। এপ্রিল ও অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে সব অঞ্চলজুড়ে দরিদ্র এবং অদরিদ্র পরিবারের জন্য ফুড ইনসিকিউরিটি এক্সপেরিয়েন্স স্কেল আরো খারাপ হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের মধ্যে, মাঝারি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ৫ শতাংশ পয়েন্ট (এপ্রিল ২০২৩-এ ২৫ শতাংশ থেকে অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৩-এ ৩০ শতাংশ), যেখানে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে (৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের জরিপের প্রশ্নাবলিতে খানার সাধারণ বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সম্পদ, কভিড-১৯ জনিত প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং মোকাবেলার কৌশল, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়ার সার্বিক চিত্র, অভিবাসন এবং রেমিটেন্সের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোসহ কভিডপূর্ব, কভিড চলাকালে এবং কভিড-পরবর্তী সময়ে পরিবারের আয় ও ব্যয়ের তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হারের পাশাপাশি এই গবেষণায় দেশে ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্যও লক্ষ করা গেছে। গিনি সহগ ব্যবহার করে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে বৈষম্যের হার ২০১৮ সালে ০.৩১ থেকে ২০২৩ সালে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৩২-তে। তবে ধনী ও দরিদ্রের আয়ের অংশের দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করলে অর্থাৎ সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয়ের অংশের তুলনায় দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের আয়ের অংশ বিবেচনায়, অনুপাতটি ২০১৮ সালে ২:১ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫:৪-এ।

সেই অনুসারে, সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের সঙ্গে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশের ব্যয়ের শেয়ারের অনুপাত ২০২০ সালে ১:৩ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ২:১-এ দাঁড়িয়েছে। যেহেতু বেশির ভাগ অতিশয় ধনী পরিবারকে সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি, বিশেষ করে শহরাঞ্চল থেকে, তাই অসমতার প্রকৃত রূপ এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।

দেশে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার ও বৈষম্যের বিপরীতে অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পেয়েছে এমন পরিবার বিগত বছরে (অক্টোবর ২০২২-সেপ্টেম্বর ২০২৩) দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর মধ্যে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ড সেবা সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে (১৫.৬৩ শতাংশ)। এ ছাড়া অন্য প্রগ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্ধক্য ভাতা ৮.৯ শতাংশ, বিধবা/স্বামী নিগৃহীত/দুস্থ মহিলা ভাতা ৪.৯৮ শতাংশ, আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা ৩.৩৪ শতাংশ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ৩.১৭ শতাংশ প্রভৃতি।

সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটিতে পাঁচটি মূল নীতিমালা সুপারিশ করা হয়। প্রথমত, সরকারকে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সারা দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করতে হবে। শহুরে দরিদ্র এবং নব্য দরিদ্র পরিবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। গৃহস্থালির মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সরকারকে বিকল্প ও পরিপূরক নীতি গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে বাজারের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং বাংলাদেশের অনেক প্রধান খাদ্যের আমদানি শুল্ক উদারীকরণ নীতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অত্যাবশ্যকীয় খাবারের (যেমন—দুগ্ধজাত খাবার, মাংস, ফলমূল ইত্যাদি) বর্ধিত সরবরাহ বাংলাদেশকে দামের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সহায়ক রাজস্ব ও আর্থিক নীতিমালা পরিপূরক হিসেবে জোরদার করা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com