যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস- ইউসিএলএ) ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সমর্থকেরা। ফিলিস্তিনপন্থীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য তারা লাঠি, রড দিয়ে আক্রমণ করে, বিয়ার ছিটিয়ে দেয়। পুলিশ এ সময় নীরব ভূমিকা পালন করে। পরে অবশ্য ফিলিস্তিনপন্থীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ সক্রিয় হয়।
জানা গেছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২২.৫০ নাগাদ হাতে স্টার অব ডেভিড পরিহিত শতাধিক ইসরাইলি সমর্থক ফিলিস্তিনপন্থীদের তাঁবু গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
স্থানীয় মিডিয়ার খবরে দেখা যায়, বিয়ার স্প্রে থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা ছাতা ব্যবহার করে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরাইলি সমর্থকেরা লাঠি ও রড হাতে হামলা করে। তাদের অনেককে শিক্ষার্থীদের ঘুষি দিতে দেখা যায়।
ডেইলি ব্রুইনের এক খবরে বলা হয়, শতাধিক ইসরাইলপন্থী ডিকসন প্লাজায ফিলিস্তিনি সংহতি তাঁবুতে বলপূর্বক প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ ‘দর্শকের’ ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইউসিএলএ-এ বিক্ষোভ হচ্ছে।
আমরা আরো কঠোরভাবে ফিরে আসব : কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা
পুলিশের নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের এক নেতা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পদত্যাগের সমর্থনে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ফিলিস্তিনিপন্থী কণ্ঠ যতবার থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, প্রতিবার তা আরো প্রবল হয়েছে। আমাদের সমাবেশে আরো বেশি জনসমাগম হবে, আরো বড় বড় বিক্ষোভ হবে।
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। তারা তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করে।
এমন প্রেক্ষাপটে আল জাজিরাকে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফর দি জুইশ ভয়েস ফর পিস অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের শীর্ষ সংগঠক ক্যামেরন জোন্স বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পদত্যাগের দাবি আরো সোচ্চার হবে।
তিনি বলেন, আবার দেখেছি যে যখনই ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠ থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন আরো প্রবলভাবে কণ্ঠ সোচ্চার হতে দেখি। আমরা আমাদের সমাবেশগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক লোক নিয়ে আসব। আমাদের বিক্ষোভগুলোতে আরো বেশি লোক সামিল হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আপনার ছাত্র সংগঠন, ফ্যাকাল্টি, অ্যালামনাই থেকে আগামী দিনগুলোতে আরো বড় প্রতিবাদ দেখবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে পুলিশের এই সহিংস নৃশংসতা পক্ষে থাকব না। আমরা যা বিশ্বাস করি, তার পক্ষে দাঁড়াব।’
তিনি বলেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ম্যানুচে শফিকের পদত্যাগের প্রতি বিপুল সমর্থন রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে যাকিছু ঘটেছে, সে ব্যাপারে সামগ্রিক তদন্তের দাবি প্রবল হচ্ছে।
এদিকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ম্যানুচে শফিক ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান করতে অনুরোধ করেছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার পর (জিএমটি ০১:০০) কয়েকজন পুলিশ অফিসার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে। ছাত্ররা মঙ্গলবার সকালে এই ভবন দখল করে এর নাম দিয়েছিল হিন্দস হল। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার শিকার ছয় বছরের শিশু হিন্দের স্মরণে তারা এই উদ্যোগ নেয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার জানায়, তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাসপেন্ড করার কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় জানায়, আমরা সবকিছু পরিষ্কার করছি।
কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিজ ইন প্যালেস্টাইন এক এক্স পোস্টে জানায়, পুলিশ অফিসাররা ‘দাঙ্গার সরঞ্জাম পরেছে, কয়েকটি ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেছে।’
তবে পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন ফিলিস্তিন’ ধ্বনি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ নামানোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা ক্যাম্পাসকে ‘সামরিকরণের’ নিন্দা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা যে কয়েকটি হল দখল করেছিল, তার অন্যতম ছিল এই হ্যামিল্টন হল।
একটি এক্স পোস্টে বিক্ষোভকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিইউএডির তিনটি দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তারা হলটিতে থাকার পরিকল্পনা করেছেন। দাবিগুলো হলো : ইসরাইল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়মুক্তি।
সূত্র : আল জাজিরা, মিডল ইস্ট আই, টাইমস অব ইসরাইল, জেরুসালেম পোস্ট