শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

দুই মাসে ব্যাংকের আয় স্থগিত হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০
  • ২৯৯ বার

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দুই মাসে ব্যাংকের আয় স্থগিত হয়ে যাবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই দুই মাসে আমানতকারীদের মুনাফা পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। দুই মাসের আয় স্থগিত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর লোকসান কিভাবে সমন্বয় করা হবে তা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়নি। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। এমনই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানান, দুই মাসের ঋণের সুদ ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখলে তাদের লোকসান হবে। তবে, এ লোকসান কিভাবে আমরা সমন্বয় করব সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্কুলার দিয়েছে তাতে সবধরনের ঋণের দুই মাসের সুদ হিসাবে ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের আমানতকারীদের দুই মাসে সুদ পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। আমানতকারীদের সুদতো আমাদের দিতেই হবে। এতে ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। এ কারণে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। নিশ্চয়ই তারা ব্যাংকগুলোর দিকটিও বিবেচনা করবে। পূবালী ব্যাংকের এমডি মো: আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আসলে ব্যাংকগুলো মানতে বাধ্য। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে যে নির্দেশনা দেবে তা পরিপালন করতে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে তা সমাধানও বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে। তিনি মনে করেন, দুই মাসের আয় ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে ব্যাংকগুলো নিঃসন্দেহে লোকসানের মুখে পড়বে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই বিবেচনা করবে বলে তারা আশা করছেন।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা তারা পরিপালন করতে শুরু করেছেন। এতে যে লোকসান হবে তা কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকিং খাতের প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড ভোক্তা ঋণ ও শিল্প ঋণসহ গড়ে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ মুনাফা হিসেবে বছরে আয় হয় এক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের কারণে গড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর মুনাফা স্থগিত হিসেবে রাখা হয়। বাকি ৯০ হাজার কোটি টাকার ১২ মাসের হিসাবে প্রতি মাসে শুধু ঋণের মুনাফাবাবদ আয় হয় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হয়। আবার এ মুনাফার বড় একটি অংশই আমানতকারীদের পরিশোধ করতে হয়। প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা আমানতের গড়ে ৬ শতাংশ মুনাফা আমানতকারীদের দিতে হলে বছরে মুনাফা দিতে হয় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। আর ১২ মাসের হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে ঋণের মুনাফা থেকে আমানতকারীদের ফেরত দিতে হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবধরনের ঋণের সুদ দুই মাসের জন্য ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ দুই মাসে ঋণের যে মুনাফা হবে তা ব্যাংকগুলোর আয় খাতে নেয়া যাবে না।

এখন ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ আয় খাতে নিতে না পারলে যে লোকসান হবে তা সমন্বয় করারও কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে এ অর্থ নেয়া যাবে না। আর ব্যাংকের আয় খাতেও এ অর্থ নেয়া যাবে না । এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন লোকসান সমন্বয় নিয়ে। এমনিতেই গত প্রায় দেড় মাস ধরে সীমিত লেনদেনের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই আয় কমে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com