করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে ঈদবাজারে চার শর্তে খোলার জন্য অনুমতি মিললেও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে রাজধানীর বেশির ভাগ মার্কেট ও বিপণিবিতানই বন্ধ থাকবে। এখনো দোটানায় রয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি মার্কেট কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার রাতে বৈঠকও করেছে। আজকের মধ্যে জানানো হবে তাদের সিদ্ধান্ত। এবারের ঈদে সবার আগে শপিংমল না খোলার ঘোষণা দেয় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক।
রাজধানীর জায়ান্ট শপিংমল দুটির এমন সিদ্ধান্তে দোটানায় পড়েছেন অন্যান্য মার্কেটের কর্তৃপক্ষ। অনেকে আবার মার্কেট না খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা আজকালের মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা ২৭ এপ্রিল দোকান-শপিংমল খোলার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অনুমতি পেতেই ১৫ রমজান শেষ। এখন দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিক্রির পরিবেশ ফেরাতে সময় লাগবে। এ ছাড়া প্রতিদিন করোনার আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। আতঙ্ক বাড়ছে জনমনে। তাই ইতোমধ্যে অনেকেই মার্কেট না খোলার ঘোষণা দিয়েছে। আবার কোনো কোনো মার্কেটের লোকজন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। শনিবারের মধ্যে এসব মার্কেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’
এদিকে ঈদের আগ পর্যন্ত রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের মধ্যে বায়তুল মোকাররম মার্কেট বন্ধ থাকবে। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে আমাদের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ক্রেতাদের নিরাপদ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ী ঐকমত্যের ভিত্তিতে মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা নিউমার্কেটও। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মার্কেট খোলার বিষয়ে যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, তাতে মার্কেটের ৪টা গেটের মধ্যে মাত্র দুটো খোলা রাখা যাবে। নতুন করে আরও একটি ট্যানেল তৈরি করতে হবে, এতকিছুর পর মনে হয় না মানুষ কেনাকাটা করতে আসবেন। এ ছাড়া করোনার এমন পরিস্থিতিতে দোকান খোলা হলে ব্যবসায়ী, কর্মচারীসহ ক্রেতাদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা সম্ভব হবে না। তাই শুক্রবার রাতে মার্কেট কমিটি আলোচনাসাপেক্ষে ঈদের আগে মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
রাজধানীর মৌচাক, আনারকলি মার্কেটও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়ার সব পাইকারি মার্কেট বন্ধ থাকবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাইকারি মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর কমপ্লেক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন সুপার মার্কেট, জাকির প্লাজা, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা, গুলিস্তান পুরান বাজার ও বঙ্গ ইসলামীয়া সুপার মার্কেট।
এ বিষয়ে বঙ্গমার্কেট মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার বিকালে বঙ্গবাজারে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বঙ্গমার্কেট ও ফুলবাড়িয়া এলাকার সব মার্কেট বন্ধ থাকবে।’
তবে মার্কেট খোলা নিয়ে দোটানায় রয়েছে চন্দ্রিমা মার্কেট কর্তৃপক্ষ। মার্কেট কমিটির সভাপতি মঞ্জুর আহম্মেদ মঞ্জু বলেন, ‘এখনো ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আশা করি শনিবারের (আজ) মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীদের মত পেলে মার্কেট খোলা হবে। কেননা মার্কেটের নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। সে বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে আংশিকভাবে খুলছে এলিফ্যান্ট রোডের মার্কেটগুলো। এই এলাকার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখা যায়। তবে আমাদের মার্কেটে কেউ চাইলে খোলা রাখতে পারেন। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে কেউ বন্ধও রাখতে পারেন।’
ঈদে খুলছে রাজধানী সুপার মার্কেট। অনেক দোকানপাট সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান, মার্কেটে পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বুসরা গার্মেন্টসের কর্ণধার মো. ফারুক হোসেন। তবে এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফারুক বলেন, ‘এ মার্কেটে আমি বাচ্চাদের পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক সরবরাহ করে থাকি। মার্কেট খোলা হবে তাই পোশাকে অর্ডার পেতে শুরু করেছি অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।’
এর আগে গত ৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল খোলার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে তা সকাল ১০টায় খুলে বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।