যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে আটক পণবন্দীদের মুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করেছেন।
দু’নেতাই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেয়ার পরের দিন ওভাল অফিসে মিলিত হন। নেতানিয়াহু বুধবার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে দেয়া এক ভাষণে হামাসের বিরুদ্ধে তার দেশের যুদ্ধের পক্ষে জোরাল বক্তব্য রাখেন। আর বাইডেন ওভাল অফিস থেকে একটি সংযত, চিন্তাশীল ভাষণ দেন, যেখানে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করেন।
তাদের একান্ত বৈঠকের পর দু’জনই খুব ছোট মন্তব্য করেন। এক দিন আগে প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, দুই নেতা একটি যুদ্ধ বিরতি এবং পণবন্দী মুক্তি চুক্তির বিস্তারিত নিয়ে কাজ করছেন, ‘যেটা আমাদের বিশ্বাস প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে।’
‘আপনাকে আবার স্বাগতম মিস্টার প্রধানমন্ত্রী,’ বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন। ‘আমাদের আলাপ করার অনেক কিছু রয়েছে, হয়তো আমাদের শুরু করে দেয়া উচিত।’
‘একজন গর্বিত ইহুদি জাওনিস্ট থেকে একজন গর্বিত আইরিশ আমেরিকান জাওনিস্ট, আমি আপনাকে ৫০ বছরের রাষ্ট্রীয় সেবা এবং ৫০ বছর ইসরাইল রাষ্ট্রকে সমর্থন করার ধন্যবাদ জানাতে চাই,’ জবাবে নেতানিয়াহু বলেন। ‘এবং আমি আপনার সাথে আজকে আলোচনা করতে এবং আগামী মাসগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী।’
হ্যারিস আর ট্রাম্পের সাথে বৈঠক
নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার পরের দিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের সাথে, এবং শুক্রবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন। ট্রাম্প এই উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী।
প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, হোয়াইট হাউসের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে হামাস, লেবানন-ভিত্তিক হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হাউছিদের মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীদের থেকে ইসরাইলের প্রতি হুমকি নিয়েও আলোচনা হবে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি ছাড়াও বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর অ্যাজেন্ডায় ছিল যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে বন্দি পণবন্দীদের মুক্তি, ইসরাইলি কারাগার থেকে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সাহায্য ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দেয়া।
যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতারের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, যেগুলো ইসরাইল এবং হামাসের পরস্পর-বিরোধী দাবীর কারণে মাসের পর মাস ধরে চলছে।
কর্মকর্তা বলেন তিন ধাপের প্রস্তাবিত চুক্তির প্রথম ধাপের কাঠামো ঠিক করা হয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে অনেক তৎপরতা’ প্রত্যাশা করছে।
প্রথম ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে, যে সময় হামাস নারী, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং অসুস্থ বা আহত পণবন্দীদের মুক্তি দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা বলেন, প্রথম পর্বের পদক্ষেপগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, শুধুমাত্র সেটা ঠিক করাই বাকি আছে।
‘হামাসের কাছ থেকে আমাদের কিছু প্রয়োজন, এবং ইসরাইলের দিক থেকে আমাদের কিছু প্রয়োজন।’ কর্মকর্তা বলেন।
তাদের বৈঠকের পর বাইডেন এবং নেতানিয়াহু পণবন্দীদের মধ্যে যারা আমেরিকান নাগরিক, তাদের পরিবারের সাথে দেখা করবেন।
হামাস গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে, ইসরাইলের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে পণবন্দী করে নিয়ে গেলে যুদ্ধ শুরু হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিভাগ নারী ও শিশু।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা