ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত হয়েছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ। এই ঘটনায় স্তম্ভিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গাজা যুদ্ধে যখন যুদ্ধবিরতির জন্য প্রচেষ্টা চলছে, তখন এই ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করবে বলে আশঙ্কা বিশ্বনেতাদের। ইসরায়েল এখনো এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সভাপতি মাহমুদ আব্বাস হানিয়াহ’র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এই হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
আব্বাসের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তিনি এটিকে একটি কাপুরুষোচিত কাজ এবং এতে পরিস্থিতি অবনতি হবে বলে মনে করছেন।’
‘তিনি জনগণ এবং তাদের বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার, ধৈর্য ধরার এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।’
আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করবে ইরান: ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন হানিয়াহ।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী ইরান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সম্মান, গর্ব এবং মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সন্ত্রাসী হানাদাররা তাদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হবে।’
‘বিশৃঙ্খলার’ আশঙ্কা করছে কাতার ও তুরস্ক: গাজা সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারে অবস্থান করছিলেন হানিয়াহ। ২০১৭ সালে নির্বাসনে যাওয়ার পর তিনি তুরস্কেও কিছু সময় কাটিয়েছিলেন।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রালয় এই হত্যাকাণ্ডকে ‘জঘন্য অপরাধ’ এবং ‘লজ্জাজনক হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, তেহরানে এই হামলা একটি ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ এবং ‘আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন’।
তারা আরও বলেছে, ‘এই হত্যাকাণ্ড এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলার মতো বেপরোয়া আচরণ অঞ্চলটিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে ক্ষুন্ন করবে।’
তুরস্কও একই সুরে নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “তেহরানে লজ্জাজনক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর হত্যাকাণ্ডের আমরা নিন্দা জানাই।’
তারা আরও বলেছে, ‘এই হামলার লক্ষ্য গাজার যুদ্ধকে আঞ্চলিক মাত্রায় ছড়িয়ে দেওয়া। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার আরও একবার প্রমাণ করল যে তাদের শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো ইচ্ছা নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ইসরায়েলকে থামাতে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমাদের অঞ্চলকে আরও বড় সংঘাতের মুখোমুখি হতে হবে।’
রাশিয়া ও চীনের নিন্দা: ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে মস্কো সফর করেন হানিয়াহ। গত সপ্তাহে হামাস এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ বেইজিংয়ে আলোচনায় বসেছিল।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ রাষ্ট্র পরিচালিত রিয়া নভোস্তি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং এটি উত্তেজনা আরও বাড়াবে।’
রাশিয়ার উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কনস্টানটিন কোসাচেভ মধ্যপ্রাচ্যে ‘আকস্মিকভাবে পারস্পরিক ঘৃণা বৃদ্ধির’ পূর্বাভাস দিয়েছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখবক্তা লিন জিয়ান বলেছেন, ‘আমরা এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও নিন্দা জানাচ্ছি।’
একত্র হচ্ছে হামাসের মিত্ররা: এই ঘটনায় ফিলিস্তিনির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে হামাসের আঞ্চলিক মিত্ররা।
ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া লেবাননের হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নেতা হানিয়াহ’র শাহাদাত… সমস্ত প্রতিরোধ ফ্রন্টের মুজাহিদীন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ়তা এবং জেদ আরও বাড়িয়ে তুলবে… এবং ইহুদি শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে।’
গোষ্ঠীটি হানিয়াহকে ‘সময়ের একজন মহান প্রতিরোধ নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি আমেরিকান কর্তৃত্ববাদী প্রকল্প এবং ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন।’
ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আলী আল-হুথি বলেছেন, ‘তাকে লক্ষ্যবস্তু করা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী অপরাধ এবং আইন ও আদর্শিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।’
আফগানিস্তানের শাসকরা হানিয়াহর মৃত্যুকে ‘একটি বড় ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছেন।