রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ইস্যুতে সংকটের পথ বন্ধ করতে চায় বিএনপিও। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আড়াই মাসে নতুন সরকার গঠন কিংবা বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির ঐকমত্য থাকলেও এই প্রথম রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে বিভেদ দেখা যাচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করছে। এই প্রেক্ষাপটে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির যারা আছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো যেন কোনো সংকট না হয়।’
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হলে গত ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়। তাই এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহবান জানান তিনি।
কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত। যে কারণে তার পদে থাকাকে সংকট মনে করছে তারা।
যদি বিএনপি রাজি না হয় রাষ্ট্রপতিকে কি অপসারণ করা সম্ভব হবে?
জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য ছাড়া এই দাবি হয়তো পরিপূর্ণ হবে না। এজন্য আমরা তাদের সাথে আবার বৈঠক করে আলোচনা করবো।’
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ জোটসহ অন্যান্য দল এবং জোট রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
অবশ্য, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, এটি বড় কোনো সংকট নয়।
মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ‘এখন যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রপতি কোনো বাধা না। কারণ তার তো তেমন কোনো ক্ষমতাও নাই। তাহলে এটি নিয়ে যে সংকটের কথা ভাবা হচ্ছে সেটি গুরুতর নয়।’
তিনি বলেন, ‘বরং তাকে সারানোর কারণে যদি কোনো সংকট তৈরি হয়, তাতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবে।’
যে কারণে বিএনপিও চাইছে এই ইস্যুতে নতুন করে সংকটের পথ বন্ধ করতে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির যারা আছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো যেন কোনো সংকট না হয়।’
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপির আপত্তি কেন?
গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
মূলত সাক্ষাৎকারে দেয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে ছোটখাটো কয়েকটি সংগঠন।
একই দিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।
এরপর গত শনিবার বিএনপির সাথে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
কিন্তু ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।’
কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে এই মুহূর্তে এই সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরো বেশি রাজনৈতিক।
বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি খুব ভালো করে জানে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। আর রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু সামনে আসলে তখন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে কারণেই হয়তো বিএনপির আপত্তি।’
সূত্র : বিবিসি