করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকায় মোহাম্মদী সেন্টারের ধর্মীয় সেবা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
আমেরিকায় এবারের করোনা মহামারি ও কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মোহাম্মদী সেন্টারের লাইভস্ট্রিম তারাবী, জুমুআ ও ঈদ জামাত হিট করেছে সারা দুনিয়ায়। ইসলামী দুনিয়ায় সৃষ্টি করেছে এক নতুন ইতিহাস।
কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে পবিত্র কাবা শরীফ সহ বিশ্বের প্রায় ছোট-বড় সকল মসজিদ ও তাতে জামাতে নামাজ আদায় করা বন্ধ হবার দু’মাস যেতে না যেতেই রহমত-বরকত-মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে এসেছিল পবিত্র মাহে রামাদান। প্রশ্ন দাঁড়ায়, কিভাবে হবে তারাবীর জামাত, যা রামাদানের রোজা রাখার জন্য অবশ্যক। কিভাবে হবে জুমুআ? একাধারে যার তিনটি জুমুআ বাদ যাবে, অন্তরে লেপন হয় এমন এক কালিমা, যার দরুণ ধর্মচর্চায় সে হয়ে পড়বে নিতান্তই অলস। লিপিবদ্ধ হবে তার নাম কপটতার ফিরিস্তিতে।
সর্বোপরি কোয়ারেন্টিনে আবদ্ধ বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মনে ছিল একই প্রশ্ন? কিভাবে হবে আমাদের ঈদের নামাজ ও ঈদ উদযাপন। কারন এক শ্রেণীর পিছনে পড়া পশ্চাৎপদ নামধারী সস্তা মিডিয়ায় আসা ধর্মীয় জ্ঞানপাপীদের বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকা ছিলেন আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান মুসল্লীরা। যাদেরকে কোরান-হাদীসের অপব্যাখ্যায় বলা হতো, একা একা পড়ো ঈদের নামাজ, খুতবা দেয়া লাগবেনা। লাইভস্ট্রিম জায়েজ নেই, আমাদের মসজিদ বন্ধ আমাদেত চাঁদা দাও। ফেসবুক লাইভস্ট্রিম্ তারাবী নামাজ ও জুমুআ উদযাপনের মত এবারের এই অস্বাভাবিক করোনা পরিস্থিতিতে ঈদ-উল-ফেতরও হবে লাইভস্ট্রিমে, নিউইয়র্ক ঈদগাহ ও মোহাম্মদী সেন্টারের এমন আশার বাণী সস্তা মিডিয়ায় এসব পশ্চাৎপদদের উস্কানী থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল আমাদের যুগোপযোগী উন্নত প্রযুক্তির এই একমাত্র ব্যবস্থাপনা। কেননা, আমাদের ঈদ আমাদের ঐতিহ্য। এটিকে বাড়িতে একা একা পড়ে, খুতবা ছাড়া পড়ে,
বাড়ির স্বল্প পরিসরের আঙিনায়, গাড়ির গ্যারেজে কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাকইয়ার্ডে পড়ে তামাশা বানানোর কোন ইবাদত নয়। আমাদের ঈদ আমাদের মুসলিম সমাজের সামাাজিক পরিচায়ক ও বাৎসরিক ধর্মীয় উদযাপন।
ইসলামী তাহজীব ও তমদ্দুনের সাথে যার রয়েছে সম্পৃক্তা। তা ছাড়াও সকল পরিবারের সকল সদস্য সহীহ শুদ্ধ ভাবে নিজঘরের বাকি সদস্যদের নিয়ে জামাতে ইমামতি করতে হয়তো অপারগ নয়তো যোগ্যতা রাখেননা বা অভ্যস্ত নন। সর্বনিম্ন ১০ জন পর্যন্ত মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার অনুমতি থাকলেও কাতারের কঠিন শর্ত কাধে কাধ না মিলিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও মাঝখানে ৬ ফিট, ৩ফিট, এমনকি ১ফিট জায়গা ফাঁক রেখে ইমামের পিছনে এমন নামাজ আদায় ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে একেবারেই নিষিদ্ধ হবার কারনে এমনভাবে জামাতে নামাজ আদায় ইমাম ও মুসল্লি সকলেরই নামাজ বাতিল বলে গন্য হবে।
এসব কথা বিবেচনা করেই নিউইয়র্কের মুসলিম কম্যিউনিটিকে যথাযত ধর্মীয় গাইডলাইন ও দিশা প্রদানের লক্ষ্যে নিউইয়র্কের শীর্ষ ইসলামী ও সামাজিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী সেন্টারের পরিচালক হিসেবে মাহে রামাদান শুরুর আগের ও মাহে শাবানের শেষ জুমুআ থেকেই করোনা পরিস্থিতি শান্ত হয়ে মসজিদ সমূহ স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত মাহে রামাদান ও রামাদান পরবর্তী প্রতিটি জুমুআ ও রামাদানে প্রতি রাতের তারাবী এবং ঈদুল ফেতরের জামাত মোহাম্মদী সেন্টারের ফেসবুক আইডি Imam Qazi Qayyoom থেকে ফেসবুক লাইভস্ট্রিমে আদায় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাৎক্ষণাতই তা চালু করি। যেহেতু পবিত্র কোরানে নামাজ কায়েম করার কথা বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় লাইভস্ট্রি প্রযুক্তিতে নামাজ পডতে বা পড়াতে নামাজের আহকাম বা আরকানের সাথে কোনভাবেই সংঘর্ষিক নহে বিধায় কিংবা উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবেনা বলে কোরান হাদীসে কাতারের মাসআলার মত স্পষ্ট বা সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রচুর সংখ্যক মুসল্লী লাইভস্ট্রিমে অংশগ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন ও হচ্ছেন।যেহেতু প্রযুক্তিতে ‘ইজনে আম’ বা জন-সমাগম হওয়াতেও কোন আপত্তি না থাকায় গত রোববার, ২৪শে মে সকাল ৯:৩০ টায় অনুষ্ঠিত লাইভস্ট্রিম ঈদ-উল-ফিতরের ঈদ জামাতে নিউইয়র্কের সময়ের সাথে মিল রেখে পাশ্ববর্তি অনেক শহর এমনকি কানাডার বিভিন্ন শহর থেকেও হাজারো মুসল্লী আমাদের লাইভস্ট্রিমে অংশগ্রহণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং তারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সময়ের সাক্ষী মোহাম্মদী সেন্টারের এই লাইভস্ট্রিমই একমাত্র ব্যবস্থা। আর এজন্যই মোহাম্মদী সেন্টারের আলোড়ন সৃষ্টিকারী উক্ত সফল ঈদ-উল-ফেতরের নাম “ঐতিহাসিক লাইভস্ট্রিম ঈদ-উল-ফেতর” বলে চিহ্নিত করি। করোনাভাইরাসে লন্ডভন্ড এমন করুণ পরিস্থিতিতে মোহাম্মদী সেন্টারের যুগোপযোগী এই পদক্ষেপকে স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের সর্বস্থরের বিচক্ষণ চিন্তাবিদগন স্বাগত জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে ঘরে বসে অশ্বস্তি বোধ করা মুসল্লিবৃন্দ, তাদের পরিবার ও বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম মোহাম্মদী সেন্টারের এই লাইভস্ট্রিম সেবা প্রদানকে অত্যন্ত প্রশংসার চোখে দেখেছেন এবং জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করার পুরোপুরি আনন্দ উপভোগ করেছেন। লাইভস্ট্রিম এই ঈদ জামাতে বয়ান, নামাজ, খুতবা ও মোনাজাত সবই ছিল জীবন্ত। নামাজ শুরুর আগে ইমাম কাজী কায়্যূম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, নিউইয়র্কস্থ মাননীয় কনসাল জেনারেল মিসেস সাদিয়া ফাইজুন নেসা, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও নিউইয়র্ক ঈদগাহ এবং মোহাম্মদী সেন্টারের লাইভষ্ট্রিম ঈদ জামাতের জন্য দেয়া স্থানীয় কংগ্রেসনাল ডিষ্ট্রিক্ট-১৪ এর কংগ্রেসউইম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজ এর ঈদের শুভেচ্ছা বাণী পড়ে শোনাই মুসল্লিদের। এছাড়াও ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট মি: এ্যারিক এডাম, আন্তধর্মীয় একটিভিষ্ট দিলিপ চৌহান ও জ্যাকসনহাইটস কম্যিউনিটি চার্চের পাদ্রী পাস্টর বটো নিজ নিজ ঈদ বাণী দিয়ে নিউইয়র্কের মুসলিম কম্যিউনিটিকে ধন্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আদি সংগঠন ফোবানা ও ড্রামা সার্কেল নিউইয়র্ক ঈদগাহ ও মোহাম্মদী সেন্টারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। লাাইভস্ট্রিমের নিয়মিত তারারী, জুমুআ ও ঈদ জামাতে অংশগ্রহণ কারী মুসল্লীদের একজন কাজী রবীউজ্জামান তার ফেসবুক কামেন্টে লিখেছেন, ‘মোহাম্মদী সেন্টারের এমন উদ্যোগ ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে আর আমরা সবাইও এমন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলাম’। আমরা আমাদের সফল ও সুন্দর ঐতিহাসিক এই ঈদ জামাতটি উৎসর্গ করি করোনাভাইরাসে জীবন উৎসর্গকারী প্রতিজন মানুষের জন্য। ফাষ্ট রেসপন্ডার্স ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবী খাদ্য সরবরাহকারী, আমাদের পুলিশ, ল এনফোর্সমেন্ট বাহিনী, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ও মিডিয়াকে। লাইভস্ট্রিমের আমাদের নিয়মিত তারাবী, জুমুআ এবং ঈদ জামাতে শরীক হয়ে ইতিহাসের অংশ যারা হয়েছেন, সবার প্রতি থাকলো আমাদের প্রাণভরা ভালোবাসা, কৃতজ্ঞা, ঈদ মোবারক ও অভিবাদন।
____প্রেস বিজ্ঞপ্তি।