শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

জীবাণুনাশক টানেলে উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকি!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
  • ১৯২ বার

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক টানেল মানবদেহ জীবাণুমুক্ত না করে উল্টো স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এটিকে অপচিকিৎসা বলে মন্তব্য করে ব্লিচিং পাউডারের মূল উপাদান ক্লোরিন মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, ব্লিচিং পাউডার ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সলিউশন দিয়ে তৈরি রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ ধরনের টানেল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত না হওয়ায় এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। মানবদেহ ছাড়াও এসব রাসায়নিক মাটি ও পানিতে মিশে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির তথ্য মতে, কার্যকর জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের ৫.২৫-৬.১৫% দ্রবণ এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ৩% দ্রবণ প্রায় ১০-১২ মিনিট যাবৎ কোনো পৃষ্ঠে প্রয়োগ করা উচিত। এতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও প্রায় ২৫ ধরনের ভাইরাস কার্যকরভাবে ধ্বংস হতে পারে। তবে সিডিসি আরো বলেছে এই ঘনমাত্রায় এ ধরনের জীবাণুনাশক কেবল জড় বস্তুর ওপরই ব্যবহার উপযোগী। কোনো প্রাণীর শরীরে সরাসরি এটি ব্যবহার করা একদমই অনুচিত। জীবাণুনাশক টানেলে উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী জানান, জীবাণুনাশক টানেল একটি অপচিকিৎসা। কারণ তা করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না; বরং এটি বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করা হচ্ছে। মানুষ মনে করছে তাতে তারা জীবাণুমুক্ত হয়ে যাচ্ছে; যা এমন সময়ে মোটেও কাম্য নয়।

তিনি বলেন, একজন মানুষ শপিংমলে গিয়ে অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসার পর বের হওয়ার সময় টানেলের ভেতর দিয়ে বের হয়ে এসে নিজেকে জীবাণুমুক্ত মনে করতে পারেন, যেটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এর ফলে ওই ব্যক্তির মধ্যে ফলস সেফটির ধারণা তৈরি হয়ে পারে সতর্কতা কমতে পারে। তার মতে, দেশের অধিকাংশ শপিংমল বা অফিস-আদালতে এগুলো ব্যবহার করা হলে যেই পরিমাণ রাসায়নিক মাটি ও পানিতে মিশবে, তা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, মানুষ কিংবা কোনো প্রাণীর শরীরের বহির্ভাগে সরাসরি জীবাণুনাশক প্রয়োগ করলে ত্বক, চোখ, নাক, এমনকি শ্বাসযন্ত্রেরও ক্ষতি হতে পারে। ত্বকে জ্বালাপোড়া, কেমিক্যাল ডার্মাটাইটিস, এমনকি কেমিক্যাল বার্ন, চোখে জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, কেমিক্যাল কনজাংটিভাইটিসও (রাসায়নিকের প্রভাবে চোখের প্রদাহ) হতে পারে। এ ছাড়া স্প্রে করা এই জীবাণুনাশক শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে গিয়ে ফুসফুসে কেমিক্যাল নিউমোনাইটিসের (রাসায়নিকের প্রভাবে ফুসফুসের প্রদাহ) কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়ার মতে, যে ধরনের রাসায়নিক এই টানেলে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসার কথা নয়। এই ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। তিনি মনে করেন, চামড়ায় জ্বালাপোড়া, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে এই ধরনের কেমিক্যালের সংস্পর্শে এলে। দীর্ঘ দিন ধরে বারবার সংস্পর্শে আসতে থাকলে আরো জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com