শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

ক্ষুধা যখন মহামারির চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ জুন, ২০২০
  • ২৪৬ বার

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি গার্মেন্ট কারখানায় দিনে ১২ ঘণ্টা করে ১ দশকেরও বেশি কাজ করেছেন শম্পা আক্তার। তার সেলাই করা ডেনিম বিশ্বজুড়ে বহু শপিং মলে শোভা পেয়েছে। মাসে তিনি ৯৫ ডলার বা ৮ হাজার টাকা বেতন পান। এই টাকা দিয়েই তার প্রতিবন্ধী ভাই,  বোন ও পিতামাতাকে সহায়তা করতেন। কিন্তু সব থেমে যায় এই মার্চে। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় তার কারখানা। ১৬ কোটির দেশ বাংলাদেশে ৫৭ হাজারেরও বেশি নিশ্চিত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় ৮০০ জন।

চীনের পর বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে এই খাত থেকে। ফলে দেশের অর্থনীতির জন্য এই খাত এতই গুরুত্বপূর্ণ যে শম্পার মতো সেলাই কর্মীদের জরুরী কর্মী হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। ফলে তারা লকডাউনের আওতার বাইরে রয়ে যায়। কিন্তু তারপরও ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া ও সংক্রমণের ভয়ে অনেক কারখানা মালিক উৎপাদন থামিয়ে দিয়েছেন। শম্পা বলেন, “আমার কারখানা ৬ সপ্তাহের জন্য বন্ধ ছিল। তখন ভাড়া দিতে পারি নি। ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ দিতে পারিনি। আমি খুব ভয়ে আর ঝুঁকিতে আছি। শুধু আমি একা না। আমার সহকর্মী সবারই একই অবস্থা।” মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।

 

এতে বলা হয়, এপ্রিলের শুরুতে প্রায় ১০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিককে ছাঁটাই বা চাকরি স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশে। এই সংখ্যা মোট গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

তবে এরপর শম্পা যেখানে কাজ করতেন, সেই কারখানা সহ দেশের বেশিরভাগ গার্মেন্ট কারখানা খোলা হয়। সরকার থেকে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়ার পর কারখানা খোলে। মে মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার জরুরী সহায়তার ঘোষণা দেয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ১০০০ কোটি টাকার জরুরী সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। তবে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও, এই ভাইরাস এখনও আক্রান্ত করে যাচ্ছে বিশ্বকে। বড় বড় ফ্যাশন ব্রান্ডগুলো এখনও ক্রয়াদেশ বাতিল করে যাচ্ছে।

ফলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা সংগ্রাম করেই যাচ্ছেন। যারা কাজে ফিরছে তারা সেই আগের অবস্থায়ই কারখানায় কাজ করছেন। অনেকের বেতন কমে যাচ্ছে। শ্রমিক ও ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা বলছেন, এতে মানুষের অবস্থা প্রচণ্ড খারাপের দিকে যাবে। অনেকেই দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মুখে পড়বে।

প্রতি ৫ গার্মেন্ট শ্রমিকের ৪ জনই নারী। এদের অনেকেই অনেক আত্মীয়কে সহায়তা করেন। এই বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চলে। আর বাংলাদেশে কেউ বেকারত্ব ভাতাও পায় না। বাংলাদেশের আইনে চাকরি চলে গেলে ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ দিতে হবে। কিন্তু অনেকেই তা দেয় না। ফলে এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘদিন চললে, করোনাভাইরাসের চেয়েও তা বেশি প্রাণঘাতি হতে পারে।

শম্পা মে মাসের শুরুতে তার কারখানায় কাজে যোগ দেন। তখনও দেশের লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রথম দিনেই তার ম্যানেজার সকল সেলাইকর্মীকে একসাথে জড়ো করে বললেন যে, যেসব দিন তারা কাজে আসেননি, সেসব দিনের ৬০ শতাংশ মজুরি দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, কাজের ক্রয়াদেশ একেবারেই থেমে গেছে। ফলে কতদিন আদৌ বেতন দেওয়া যাবে, সেটিই অনিশ্চিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com