করোনায় বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনের রেকর্ড আক্রান্তের পাশাপাশি দেশটিতে এখনও বাড়ছে স্বজন হারাদের মিছিল। এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন এক লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বে গেল ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে চিলি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার নতুন হটস্পট হতে যাচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি। সিঙ্গাপুরে নতুন করোনা আক্রান্তদের অর্ধেকই উপসর্গহীন। এ নিয়ে চিন্তিত দেশটির সরকার। পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও লকডাউনের পক্ষে নন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার দাবি, এসব অভিজাতদের ধারণা। এতে লাভও তাদের। কিন্তু পথে বসবে গরিবরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সৌদি যুবরাজ প্রিন্স সৌদ বিন আবদুল্লাহ বিন ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪ জন। মারা গেছেন চার লাখ ৭ হাজার ৪৯২ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৫৩ হাজার ৭৭৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ৭৪৫। সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৩৪২ জন। রোববার আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১৩ হাজার ৪১৭ জন। সোমবার রাত ১২ পর্যন্ত ২ হাজার ৪০৯ জন মারা গেছেন। রোববার ৩ হাজার ৩৮৫ জন মারা গেছেন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। রোববার আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ৩৭৩ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ১৪ হাজার ৩৩২ জন, মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৬৪৬ জনের। যুক্তরাষ্ট্রের শুধু নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যেই আক্রান্ত চার লাখের কাছাকাছি। যেখানে ৩০ হাজার ৪৪২ জন মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিউজার্সিতে আক্রান্ত এক লাখ সাড়ে ৬৬ হাজার। সেখানে ১২ হাজার ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। অঙ্গরাজ্যটিতে সংক্রমণ প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার, প্রাণহানি চার হাজার ৬৫৩ জন। ইলিনয়সে আক্রান্ত এক লাখ ২৮ হাজারের কাছাকাছি, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৯০৪ জনের।
বিশ্ব তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫৪২ জনের। দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্ত ছয় লাখ ৯৪ হাজার ১১৬ জন, মারা গেছেন ৩৭ হাজার ৩১২ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা চার লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৮ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৭১ জনের। চতুর্থ স্থানে থাকা স্পেনে আক্রান্ত দুই লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৭ জন, মারা গেছেন ২৭ হাজার ১৩৬ জন। এরপর যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত দুই লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৯ জন, মারা গেছেন ৪০ হাজার ৫৯৭ জন। ভারতে আক্রান্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮২৭ জন, মারা গেছেন ৭ হাজার ৪৭৩ জন। ইতালিতে আক্রান্ত দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৭৮ জন, মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৯৬৪ জন।
চিলিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু : প্রথম দিকে চিলিতে করোনার সংক্রমণ ছিল খুবই কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। রোববার দেশটিতে ছয় হাজার ৪০৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, ৬৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এদিন বিশ্বব্যাপী এক দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এদিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে ৫৪২ জন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বব্যাপী যখন কঠোর লকডাউন এবং কারফিউ চলছিল, তখন ব্রাজিল, চিলিসহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লকডাউন শিথিল করার কারণে এখন দেশগুলোতে সংক্রমণ তীব্র হয়েছে।
পাকিস্তানে আক্রান্ত লাখ ছাড়িয়েছে : ফেব্রুয়ারিতে মহামারী শুরুর পর রোববার পাকিস্তানে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সেখানে মোট আক্রান্ত এক লাখ তিন হাজার ৬৭১ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৬৭ জনের। এমন পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানে ফের লকডাউন জারি করতে রাজি নন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার দাবি, লকডাউন অভিজাতদের পক্ষেই সুবিধাজনক। তাতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বেন দেশের গরিবরাই। তিনি বলেন, লকডাউন চাইছেন অভিজাতরা যাদের বিশাল বাড়ি রয়েছে। কারণ এতে তাদের আয়ে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এটি গরিব মানুষকে ধ্বংস করে দেবে।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্তদের অর্ধেক উপসর্গবিহীন : সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্তদের ৫০ শতাংশই উপসর্গবিহীন। দেশটিতে এক দিকে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন এই উপসর্গবিহীনরা চিন্তায় ফেলছে দেশটির সরকারকে। করোনা মোকাবেলায় গঠিত সিঙ্গাপুরের টাস্কফোর্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লরেন্স ওং এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, উপসর্গযুক্ত একজন রোগীর সঙ্গে উপসর্গবিহীন রোগীও একজন পাওয়া যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই আমাদের সবকিছু পুনরায় চালু করার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
সৌদি রাজপুত্রের করোনায় মৃত্যু : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এবার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেশটির এক রাজপুত্র। বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ এর কারণে সৌদি যুবরাজ প্রিন্স সৌদ বিন আবদুল্লাহ বিন ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ মারা গেছেন। দেশটির রয়্যাল কোর্ট তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে।