আধুনিককালের সবচেয়ে ভয়ানক একটি রোগ হলো স্ট্রোক। একে মানব জীবনের জন্য ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কিন্তু স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। যেমন-রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও ওজন ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত শাকসবজি, সতেজ ফলমূল খাওয়া। তাই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প ভিন্ন কোনো পথ নেই।
স্ট্রোকের লক্ষণ : হঠাৎ করে শরীরের একাংশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও বমি হওয়া, হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা একেবারেই কথা বলতে না পারা।
তাৎক্ষণিক করণীয় : কোনো রোগীর মধ্যে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে তার স্ট্রোক হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া উচিত। সম্ভব হলে মস্তিষ্কের CT Scan করে স্ট্রোকের ধরন বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক দুই ধরনের হয়ে থাকে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে অথবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য। আবার উভয় ধরনের স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্নতর।
জরুরি চিকিৎসা : অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে করণীয় হলো-শ্বাসনালি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তসঞ্চালন নিয়মিত রাখা। রোগীকে একদিকে কাত করে, বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে। চোখের যত্ন নিতে হবে। মূত্রথলির যত্ন (প্রয়োজনে ক্যাথেটার দিতে হবে)। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্ট্রোকের সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, রোগী অজ্ঞান হলে অথবা স্ট্রোকের সঙ্গে অন্যান্য রোগ, যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো-মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে আনা, কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং পরবর্তীকালে যেন স্ট্রোক না হয়, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মুখ বেঁকে গেলে : বিশেষজ্ঞ চিকিৎরের পরামর্শে চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপি করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল