চোখের সামনে যে ঘরে একমাত্র ছেলেকে পুড়ে অঙ্গার হতে দেখেছিলেন দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু, পাঁচ মাসের ব্যবধানে ঠিক সেই ঘরেই রহস্যজনক এক অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনিও। আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল সাংবাদিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোররাতে বাড্ডার আফতাবনগরের নিজ বাসায় অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু। এদিন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
গতকাল ওই হাসপাতালের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সাংবাদিক নান্নুর শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ গভীর দগ্ধ হয়েছে। তার শ্বাসনালী পোড়েনি। তবে ১৫ শতাংশের বেশি পুড়লেই রোগীকে ক্রিটিক্যাল বলা হয়। সেই হিসেবে নান্নুর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল।’
এর আগে গত ২ জানুয়ারি আফতাবনগরের ওই বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিশনের (ক্র্যাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক নান্নুর একমাত্র ছেলে স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াস (২৪)। ওই ঘটনায় নান্নুও দগ্ধ ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী শাহানা পল্লবী জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন নান্নু। রাত ৩টার দিকে যে ঘরে তাদের সন্তান স্বপ্নিল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন, সেই ঘরে যান তিনি। অন্ধকারে কিছুক্ষণ স্বপ্নিলের খাটে বসে ছিলেন নান্নু। একপর্যায়ে লাইটের সুইচ অন করতেই বিকট শব্দে ঘরে আগুন ধরে যায়। এ সময় নান্নুর শরীরের পেছন দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন পল্লবী। নান্নু নিজেই দৌঁড়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে নিজের শরীরের আগুন নেভান। পরে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসে গুরুতর দগ্ধ নান্নুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্যরা ঘরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
নান্নুর স্ত্রী আরও জানান, স্বপ্নীল মারা যাওয়ার পর তারা ওই ফ্ল্যাটে না থেকে বেশ কিছুদিন অন্য বাসায় ছিলেন। এর মধ্যে পুড়ে যাওয়া ঘর ঠিক করা হয়। প্রায় ছয় মাস পর জুনের শুরুতে এই ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। বাসায় ওঠার পর থেকে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। বিষয়টি ডেভেলপার কোম্পানিকে জানিয়েছেনও। শুক্রবার লোক এসে বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছিল ডেভেলপার কোম্পানি। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলেও ধারণা করছেন পল্লবী।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দুটি ইউনিট যাওয়ার আগেই ভবনের বাসিন্দারা আগুন নিভিয়ে ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস বিস্ফোরণে কারণেই ঘটে এই অগ্নিকাণ্ড।’