মো. মোজাম্মেল হক। ৬৭ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। জীবনের শেষ বয়সে এসে আবারও অদৃশ্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন।
করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধা বাসায় ফিরেছেন ঠিকই। কিন্তু দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে চরম তিক্ত অভিজ্ঞতা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ও তার পরিবার। কারণ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দিনে মাত্র ৩০ মিনিট অক্সিজেন ব্যবহারের বিল দিতে হয়েছে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। শুধু তাই নয়, ডিউটি ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসকই তাকে দেখেনি হাসপাতালে। তবুও চিকিৎসকের কনসালটেন্ট ফি দিতে হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা।
আজ রোববার দুপুরে কাছে এসব অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. তৌহিদুল হক সোহেল।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা চট্টগ্রামে থাকতেন। সেখানে তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পরেই ঢাকায় এনেছি। বাবার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গই ছিলো না। তবুও যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেকারণে তাকে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করছিলাম।’
‘এ ছাড়া কোনো ক্লিনার বা অন্য কেউ যায়নি তার রুমে। তবুও রুমের সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা’, বলেন তিনি।
এই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ লাগার বিষয় হলো আমার বাবার কোনো শ্বাসকষ্ট ছিল না। তাকে আমি নিজেই অক্সিমিটার কিনে দিয়েছিলাম। দুই দিন তার সামান্য অক্সিজেনের দরকার হয়েছে। মাত্র ১০/১৫ মিনিট করে দুই দিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট অক্সিজেন নিতে হয়েছে বাবাকে। তবু্ও সেই অক্সিজেনের বিল তারা করেছেন ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।’
‘আমি হাসপাতালে জিজ্ঞাসা করছিলাম প্রতি ঘণ্টা অক্সিজেনের বিল কত। তারা তখন আমাকে জানায় ঘণ্টা ৪০০ টাকা। যদি সেই হিসেবেও ধরি যে দুই দিন ২৪ ঘণ্টাই বাবার অক্সিজেন লেগেছে। তবুও তো এত বিল হবে না’, যোগ করেন তৌহিদুল হক সোহেল।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের বিলগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘হাসপাতালে ৯ দিনে ২১৬ ঘণ্টার বিল অক্সিজেন বিল ৪০০ টাকা হিসাবে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। হাসপাতালের বিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪২০ টাকা। চিকিৎসকের ফি ৪৯ হাজার টাকা। ইনভেস্টিগেশন বিল ৮ হাজার ১৭০ টাকা এবং ওষধের বিল ধরে দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৭৫২ টাকা।
ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হকের ছেলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের ম্যানেজার মো. নেওয়াজের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের৷ তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার জানা নেই।’
অক্সিজেনের বিল প্রতি ঘণ্টায় কত টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাও আমি জানি না।’ এই বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
পরে অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এর আগে, মো. হুমায়ুন ( ৪১) নামে ফকিরাপুলের এক করোনা রোগীর কাছ থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিল দাবি করে আনোয়ার খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এত টাকার বিল দেখে মাথায় হাত পড়ে সেই অসহায় রোগীর। পরে সেই বিলের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে শুধুমাত্র ২০ হাজার ৭০০ টাকা বিল পরিশোধ করে রিলিজ পান তিনি৷
একই ঘটনা ঘটেছিল সাইফুর রহমান নামের অপর এক করোনারোগীর সঙ্গেও। সেই রোগীর কাছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বিল দাবি করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
পরে রাতেই এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে ওই রোগী ছাড়া পেয়ে বাসায় গিয়েছিলেন। অবশেষে বিলের জন্য আটকে রাখা সেই রোগীকেও টাকা ফেরত দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে সেই রোগীর স্বজনদের ডেকে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ‘সরি’ বলে ফেরত দিয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল।