আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশ কম। দেশে যেসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সেগুলোর আমদানিমূল্যও কম। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা ছাড়াই চোরাই পথে সে দেশ থেকে প্রতিদিনই পেঁয়াজ আসছে। কিন্তু দেশের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রায় এক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম ঘোরাফেরা করছে ১০০ টাকার আশপাশে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বাজারে এমন অযৌক্তিক মূল্য অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, সেগুলোর দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৪২ টাকা। একই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এর আগে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মিসরের পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে, বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় আমদানি মূল্যের সাথে বাজারমূল্যের ব্যবধানও বাড়ছে।
আমদানি তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলেও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দিনে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে আট হাজার ৫৬৮ টন পেঁয়াজ। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সব মিলিয়ে ২০ দিনে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন। যদিও দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা, উৎপাদন এবং আমদানির সঠিক তথ্য সরকারের কোনো সংস্থার কাছেই নেই।
এ দিকে পেঁয়াজ রফতানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ আশ্বাস দেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। তবে এ জন্য আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি। মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। গত ২১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এরই মধ্যে ২৬ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
গত সপ্তাহে বাজারে যে মুরগি বিক্রি হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে, গতকাল সেগুলো বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। খুচরা বাজারে পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আর লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। বিক্রি না বাড়লেও বাজারভেদে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগে যে ডিমের ডজন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সে ডিম গতকাল বিক্রি হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। আর প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়।
বাজার ও মানভেদে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। রুই মাছ ও কাতল মাছ বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। স্বস্তি দিচ্ছে না ছোট মাছও। কাচকি মাছ বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। কয়েক মাস ধরেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ।
ঢাকার বাজারে গতকাল ছোট আকারের প্রতিটি লাউ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বেগুন, পটোল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, কাঁকরল, ঢেঁড়স, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। বেগুন, ঝিঙা, ধুন্দল ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ছোট আকারের প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ধনে পাতার কেজি ৩০০ টাকা। কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।