করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন ২৩৯ জন গবেষক। তাদের দাবি, করোনা সংক্রমণের সবগুলো কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস বিস্তারে দুটি কারণের কথা বলে বলে থাকে। একটি হলো- বায়ুর মাধ্যমে এটি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা (ড্রপলেট) শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে ঢুকলে করোনা সংক্রমিত হয়। আর অপরটি হলো- আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির স্পর্শ বা করোনার জীবাণু রয়েছে এমন কোনো বস্তু স্পর্শ করলে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করার মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়।
করোনা সংক্রমণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো এ দুই বিষয়ের বাইরেও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে বলে দাবি এ ২৩৯ গবেষকের। তাদের দাবি, করোনা সংক্রমণে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সে বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অস্বীকার করে আসছে। আর তৃতীয় এ বিষয়টি হলো- করোনার জীবাণু বাতাসে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং তা বেশ দূর পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেটের ক্ষুদ্র অংশ বা অ্যারোসল কণা দীর্ঘ সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এটি কয়েক মিটার পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে। এটি যেসব ঘরে আলো-বাতাস কম বা বাসসহ অন্যান্য বন্ধ জায়গায় বেশি মারাত্মক হতে পারে। এমনকি এসব জায়গায় ১ দশমিক ৮ মিটার দূরত্ব রেখেও কোনো লাভ হয় না।
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বিজ্ঞান এবং পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লিডিয়া মোরাউসকা বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত।’
আর এ বিষয়ে ৩২ দেশের ২৩৯ জন গবেষক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে খোলা চিঠি লিখেছেন। এতে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এ ঝুঁকি সম্পর্কে যথাযথ সতর্ক করতে ব্যর্থ বলে অভিযুক্ত করেছেন। আগামী সপ্তাহে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে এটি প্রকাশ হতে পারে।
গবেষকেরা বলেছেন, বাতাসে ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি কয়েকটি বিস্তৃত সংক্রমণের ব্যাখ্যা করার একমাত্র উপায় হতে পারে। এর মধ্যে চীনের রেস্তোরাঁয় বা ওয়াশিংটনে শিল্পীদের মহড়ার সময় আগাম সতর্কব্যবস্থা নেওয়ার পরেও সংক্রমণের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বায়ুর মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও বলা হচ্ছে, এটি কেবল ইনকিউবেশনের মতো চিকিৎসা কার্যক্রমের সময় ছড়াতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ বেনডেট্টা অ্যালেগারাঞ্চি বলেন, ‘মোরাউসকা ও তার গবেষক দল পরীক্ষাগারের তত্ত্বের ভিত্তিতে এ কথা বলছেন। তাদের মাঠপর্যায়ের কোনো প্রমাণ নেই। আমরা এ বিতর্কে তাদের অবদান ও মতামতকে সম্মান দিচ্ছি।’
টেলিকনফারেন্সে ৩০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক গবেষক, যাদের ২০ জনের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক বাতাস থেকে সংক্রমণের বিষয়টি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সঠিক উপায়ে মাস্ক পরলে তা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এ ছাড়া ঘরে যথেষ্ট আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকতে হবে।