শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

অর্থনীতি বদলাচ্ছে, আমাদেরও বদলাতে হবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০
  • ২৫৫ বার

মনে হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি প্রাচীনকালের ইতিহাসের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। কোভিড–১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত যেটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শুরুতে সবাই মনে করেছিল বিশ্ব অর্থনীতি ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের কায়দায় আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে। অর্থাৎ ‘ভি’ অক্ষরের বাহু যেভাবে খাড়াখাড়িভাবে নিচের দিকে গিয়ে আবার খাদ থেকে সোজা ওপরের দিকে উঠে আসে, সেভাবে খাদে পড়া বিশ্ব অর্থনীতির সূচক আবার সঁাই সঁাই গতিতে আগের জায়গায় চলে আসবে।

কিন্তু দুই মাস ধরে বিশ্বব্যাপী প্রণোদনার অর্থের পাহাড় ছড়িয়ে দেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে আর্থিক সংকট আগের চেয়ে আরও খারাপ অবস্থায় চলে এসেছে। এখন সবাই বুঝতে পারছে ‘ভি’ আকারের ‘রিকভারি’ আসলে আকাশকুসুম কল্পনার বিষয় ছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে মহামারি–পরবর্তী অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি রক্তস্বল্পতায় ভুগবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো যেসব দেশ করোনা মোকাবিলায় ভয়ানকভাবে ব্যর্থ হয়েছে, শুধু সেসব দেশই নয়, বরং যেসব দেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে, তারাও এই ‘রক্তস্বল্পতা’ রোগ থেকে রেহাই পাবে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বলেছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতি ২০১৯ সালের বিশ্ব অর্থনীতির চেয়ে খুব একটা বড় হতে পারবে না। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪ শতাংশ কম ছিল।

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি দুটি স্তর থেকে দেখা যেতে পারে।

সামষ্টিক অর্থনীতি বলছে, মানুষের ব্যয়ের সামর্থ্য আরও পড়ে যাবে। এতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যালান্স শিট দুর্বল হয়ে পড়বে। একের পর এক কোম্পানি দেউলিয়াত্বের দিকে যাবে, যা অর্থনীতির সাংগঠনিক ভিত্ত্বিকে ভেঙে ফেলবে।

একই সঙ্গে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলছে, এই করোনাভাইরাস মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বা পারস্পরিক সংস্পর্শের ওপর ট্যাক্স আরোপের মতো কাজ করছে। করোনাভাইরাস পণ্যের উৎপাদন, বিপণন এমনকি ভোগের ধরন পাল্টে দিয়েছে। তার মানে বিশ্ব অর্থনীতির যে প্রচলিত কাঠামো এত দিন ছিল, তাতে বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছে এই ভাইরাস।

আমরা অর্থনৈতিক থিওরি ও ইতিহাস—এ দুই সূত্র থেকেই জানতে পারছি, বাজারে এ ধরনের আকস্মিক পরিবর্তন গোটা ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে। একজন বিমানকর্মীকে রাতারাতি একজন জুম টেকনিশিয়ান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু সেটিই এখন করতে হচ্ছে। প্রতিটি খাতে এখন প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ কর্মীকে রাখা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত বিদ্যা যাঁদের নেই, তাঁদের ছাঁটাই তালিকার ওপরের দিকে রাখা হচ্ছে।

উৎপাদনব্যবস্থার কাঠামোয় এমন পরিবর্তন আসছে, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। এতে কর্মীর সংখ্যা বেশি লাগছে না। উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে। আরেকটি বিষয় হলো যেহেতু ভাইরাস মেশিনকে আক্রান্ত করতে পারে না, সেহেতু চাকরিদাতাদের প্রথম পছন্দ হবে মেশিন। মেশিনই এখন অতি দ্রুত শ্রমিকের অভাব পূরণ করছে।

যেহেতু কোভিড–১৯ নিয়েই আমাদের দীর্ঘ সময় থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে। সেহেতু উৎপাদন ও ভোগ ব্যবস্থাপনাকে আমাদের যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। আগামী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমরা এই মহামারির মধ্য দিয়ে যাব—এমনটি মাথায় রেখেই আমাদের অর্থনীতির পরিকাঠামোকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। যত দ্রুত আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব, ততই মঙ্গল।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই. স্টিগলিৎস: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com