রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বিরাজ করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন চৌদ্দ দলের শরিকদের মাঝে। তাদের দাবি, রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধের ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। যেটা কিনা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীদেরই স্বপ্ন ছিল। বিএনপি সরকারের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। এদিকে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও ক্ষোভ রয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মধ্যেও। আগামীকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এর বহির্প্রকাশ ঘটবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
চৌদ্দ দলের শরিকদের দাবি, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। খুব অসময়ে এ সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এতে মানুষের সংকট আরও বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আমাদের সময়কে বলেন, ‘সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ জাতির জনকের প্রতিশ্রুতি ছিল লোকসান হলেও পাট শ্রমিক ও চাষিদের কথা বিবেচনা করে পাটকল চালু রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও আত্মঘাতী। স্বাধীনতার পর পাটকল বন্ধ করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে আদমজী পাটকল বন্ধ করে তৎকালীন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী নিজামী বলেছিলেন যে, আদমজী বন্ধ করে অনেক দিনের স্বপ্ন তারা পূরণ করেছে। এবার সব পাটকল বন্ধ করে দিয়ে অতীত সরকারের মতোই ষড়যন্ত্রকারীদের জিতিয়ে দিল।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া আমাদের সময়কে বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে লুটেরাশ্রেণিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে।’ জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘এখন বৈশ্বিক মহামারী চলছে। এমন অবস্থায় সরকার এ সিদ্ধান্ত না নিলেও পারত।’
বন্ধ না করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশীয় পাটশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান চৌদ্দ দলের নেতারা। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলগুলো রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল চুয়ান্নের যুক্তফ্রন্ট্রের ২১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের ১১ দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ সব পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে সে অঙ্গীকারকে পদদলিত করেছে।
২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শিল্পমন্ত্রী নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর আজ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মন্ত্রীর হাত দিয়ে বাকি ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশের দেশ ভারত যখন পাটশিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে ঠিক তখন বাংলাদেশ সরকারের এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।
এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা আমাদের সময়কে বলেন, ‘জানি না কেন সরকার এ সিদ্ধান্ত (পাটকল বন্ধ) নিল। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এমন সিদ্ধান্ত না নিলেও পারত। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার। বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।