রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড ও এমআইটির মামলা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
  • ২৩০ বার

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় দুই বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউড অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইটি)।

গতকাল বুধবার বোস্টনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে দায়ের করা মামলায় গত ৬ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ঘোষণা স্থগিতের আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনে ওই ঘোষণাকে বেআইনি আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে এসব বিশ্ববিদ্যালয় যদি শুধু অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এসব শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

গত ৬ জুলাই মার্কিন প্রশাসনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, এ ধরনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হয় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে, অন্যথায় তাদের ফেরত পাঠানো হবে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটি।

আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, তারা গত মার্চ থেকে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের নীতির ওপর থেকে নির্ভর করে আসছে। ওই নীতিতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান ও নতুন শিক্ষার্থীদের সেদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত থাকলে দেশটিতে অবস্থান করে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড ছেড়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে এমন ক্লাসে অংশ নিতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিবাসন সংক্রান্ত এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

এ নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষরা। বুধবার সিদ্ধান্তটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে- ওই দুই বিদ্যাপীঠ।

সরকারি নির্দেশনার আওতায়, আগামী ফল সেমিস্টারে (আগস্ট–ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলতি সপ্তাহেই সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দেয় হার্ভার্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য তা সমানভাবে প্রযোজ্য।

মামলার কারণ জানিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন’কে পাঠানো এক বিবৃতিতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানান, ‘তাদের ৫ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভার্চুয়াল পাঠদানে অংশ নিতে হবে। এ অবস্থায় সরকারের সিদ্ধান্তটি ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের সমান। আগে থেকেই কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে নেওয়া- এ সিদ্ধান্তের নিষ্ঠুরতাকে শুধু এর হঠকারিতার সঙ্গেই তুলনা করা চলে।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ল্যারি বেকো স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আগামী সেমিস্টারে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শিক্ষার্থীদের জন্য স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিতির সিদ্ধান্ত নেয়, সে জন্যেই ইচ্ছেকৃতভাবে অন্যায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনার এটাই মূল উদ্দেশ্য। অথচ এভাবে ক্যাম্পাস চালু রেখে পাঠদান চালিয়ে গেলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা সহযোগী অন্যান্য পেশাজীবীরা যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়বেন- তা একবার বিবেচনা করা হয়নি।’

সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের আওতায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রাপ্তিতে কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এসে অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে আগ্রহীদের আগমনে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্কনীতি প্রয়োগকারী সংস্থা (আইস) অবশ্য দাবি করে, আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন এবং স্বশরীরে পাঠদান কার্যক্রমের ‘হাইব্রিড’ মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ুয়া বিদেশীরা স্বশরীরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে পারে বলেও পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। তাই অভিবাসন নির্দেশনাটির প্রয়োগ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের জেলা আদালতে যৌথভাবে মামলা দায়ের করেছে হার্ভার্ড ও এমআইটি। মামলার অভিযোগপত্রে, সরকারি নির্দেশনা জারির প্রচলিত ধারাবাহিকতা ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খুলে দিতে চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে নতুন আদেশ জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস চালু করেছে। বসন্তকালীন সেমিস্টারের সব ক্লাস অনলাইনে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্তকে ‘অদ্ভূত’ বলে আখ্যা দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com