আসন্ন ঈদুল আজহায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) শহরে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উভয় সংস্থাই হাটের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় কমিয়ে এনেছে। ইজারাদারদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে পালনীয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বলেছে, পশুর হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোরবানির হাটের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য একটি সম্ভাব্য নির্দেশনাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন হাটগুলোয় সংক্রমণ ঠেকানোও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, ডিএসসিসি সূত্র জানায়, গত ১৪ জুন প্রতিষ্ঠানটি ১৪টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা পেতে গণমাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেছিল। স্থায়ী চারটি হাট বাদে ১৪টি হাটের মধ্যে সর্বমোট পাঁচটি হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডিএসসিসির যে হাটগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা হলো- উত্তর শাহজানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা। পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালী জায়গা। লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা এবং আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ সেকশন-১ ও ২ এর খালি জায়গা।
এদিকে ডিএনসিসিও মাসখানেক আগে গাবতলী স্থায়ী হাট বাদে ১০টি অস্থায়ী হাটের দপরত্র আহ্বান করে। করোনা সংক্রমণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে তারা ওইসব দরপত্র বাতিল করে ঢাকার চারপাশে ছয়টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে গাবতলী স্থায়ী হাটও রয়েছে। বাকি হাটগুলো হলো উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা। কাওলা শিয়ালডাঙাসংলগ্ন খালি জায়গা এবং পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা। ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তর খান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পশুর হাটের স্বাস্থ্যবিধির একটি খসড়া তৈরি করে পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এটি যাচাই-বাছাই শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নির্দেশনাগুলো কয়েক
ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির হাট কমিটির জন্য আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে প্রস্তাবনা অনুযায়ী।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী যেসব নির্দেশনা থাকতে পারে, তা হলো- হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোনো অবস্থায় বদ্ধ জায়গায় হাট বসানো যাবে না। হাট বসানোর আগে মহামারী প্রতিরোধ সামগ্রী, যেমনÑ মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সাবান/সাধারণ সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পশুর হাটের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার এবং মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। হাটে যুক্ত সব কর্মীকে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিতে হবে।
জনস্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিষয়গুলো, যেমন- মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে, মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাট কর্তৃপক্ষ চাইলে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে পারে বা এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল পর্দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করতে হবে। গরুর হাটে প্রবেশের জন্য গেট (প্রবেশপথ ও বাহিরপথ) নির্দিষ্ট করতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টিম গঠনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতারা কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু কিনতে পারেন। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর সময়কাল যেন কম হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। লাইনে দাঁড়ানোর জন্য ৩ ফুট বা কমপক্ষে ২ হাত দূরত্বে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করার প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে। সব পশু একসঙ্গে হাটে প্রবেশ না করিয়ে হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু প্রবেশ করাতে হবে।
হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করা সম্ভব এমন সংখ্যক ক্রেতাকে হাটে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অবশিষ্ট ক্রেতারা হাটের বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন। একটি পশু কিনতে এক বা দুই জনের বেশি ক্রেতা হাটে প্রবেশ করবেন না। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ হাটে প্রবেশ করবেন না। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা হাটে আসতে পারবেন না। পশুর হাটে প্রবেশের আগে ও বের হওয়ার সময় তরল সাবান বা সাধারণ সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা যারাই আসবেন, তাদের হাট কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পশুর হাট নিয়ে ইতোমধ্যে আলাদা কিছু বাধ্যতামূলকক নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয় হাটের প্রবেশ পথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক, হেডক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত এবং এ কাজ তদারকির জন্য মনিটারিং টিম রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধিসংবলিত ব্যানার, পোস্টার টাঙানোসহ এ বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। (বেসিন স্থাপনের ডিজাইন আগেই ডিএনসিসি বরাবর জমা দিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে)।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ইজারাদাররা হাট পরিচালনা করবেন। করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে একটি দিকনির্দেশনা তেরি করেছে। যারা হাটের ইজারা পেয়েছেন তাদের ডেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনাসহ কয়েকটি দিকনির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, মানুষের জীবনের মূল্যে অনেক বেশি। সিটি করপোরেশন কিছু রাজস্ব হারালেও আমরা হাটের সংখ্যা কমিয়ে এনেছি এবং ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পরও স্বাস্থ্যবিধিসম্পর্কিত কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হবে। যারা এসব নির্দেশনা মানবেন না, তাদের হাটের ইজারা বাতিল করা হবে।